তোমার গর্ভে ধারণ করে আমায় দেখালে ধরণীর আলো,
আদর মাখা মমতার ছোঁয়া পেয়ে সবই লাগত ভালো।
রাতে ঘুম না আসলে ঘুমপাড়ানীকে ডেকে আনতে,
শিরে হাত ফিরিয়ে দিয়ে কতনা গল্প শোনাতে।
নিজ হাতে খেতে পারতামনা কিছু কত সোহাগে খাওয়াতে,
অকারণে কাঁদলে দু'হাত দিয়ে আঁখির জল মুছিয়ে দিতে।
খেলতে গিয়ে কখনো আঘাত পেলে ছুটে এসে কোলে তুলতে,
করতাম যদি আবদার তুমি হাসিমুখে পূর্ণ করতে।
মমতার পরশ মায়ার বাঁধন সবকিছু ছিন্ন করে,
এ ধারাতে আমায় একা ফেলে রেখে গেলে তুমি মরে!
নিয়ে গেলে সর্বসুখ আর আমার মুখের মিষ্টি হাসি,
কেমন করে সেসব ভুলব মা আমি তোমায় যে ভালবাসি।
সারাদিন বসে ভাবি ঈশ্বর এত র্নিদয় হন কেন?
আমার এত দুঃখ বেদনা সে দেখতে পাই না যেন!
নির্মম ভাবে ছিনিয়ে নিলো দয়াময়ীর ছায়া!
আহা আর কে করবে তার মত এত মধুর মায়া।
চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি আমি সহনশীলতার মলিন মুখ!
তাই বুঝি আজ ছেড়ে চলে গেছে জীবনের সমস্ত সুখ।
কার শীতল কোলে মাথা রেখে নিশি ঘুমে বিলীন হব,
শত দুঃখ যন্ত্রণার কথা এখন কার সামনে গিয়ে বলব।
নিজে অভুক্ত থেকে কে তুলে দেবে মুখে একমুঠো ভাত,
কে সহ্য করবে সারাদিন আমার এত উৎপাত।
এখন অসুখ হলে আর দেখে না মা'য়ের মত কেউ,
আমি অসুস্থ হলে দেখেছি ওই নেত্রে নোনা জলের ঢেউ!
স্নেহময়ী কে হারিয়ে এ জীবন হয়ে পড়েছে দেখ কত অচল,
নয়নের বারি মোছার জন্য আর পাবনা সেই আঁচল!
স্নেহের পরশ থেকে আজ চিরতরে হলাম বঞ্চিত,
মাতৃহারা অভাগা শিশু হই সকলের কাছে লাঞ্ছিত!
প্রতি কালো রাতে নীরবে একলা ঘুমিয়ে থাকি,
এখন আর জেগে থাকেনা নিদ্রাহীন কারো আঁখি।
ঘুম না আসলে এত সোহাগে ছড়া আর কে শোনাবে,
গল্প বলে ঘুম পাড়ানী মাসিকে কে ডেকে আনব।
প্রতি রাতে অধীর আগ্রহে চেয়ে দেখি অন্তরীক্ষের দিকে,
হাজারো জ্বলন্ত তারার মধ্যে দেখতে পাই চেনা মুখটিকে।
হালকা অনিলের আবেশে মনে জাগে ক্ষমাকারিনীর উপস্থিতি,
দূর থেকে যেন করে আশীর্বাদ আমার ওপর যথারীতি।
চেয়ে দেখি করুণাময়ীর কবর খানি ঐ পবিত্র গোরস্থানে!
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন শান্তিতে থাকে সেখানে।
আমি হাজারো শ্রদ্ধাজ্ঞলি জানাই ওগো জননী তোমার প্রতি,
আমার হৃদয়ে গাঁথা থাকবে রেখে যাওয়া মমতাময়ী স্মৃতি।


রচনাকালঃ- ১৩/১১/২০১৬