ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষারম্ভ পয়লা বৈশাখ। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে।


বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা ব্যঞ্জন ভক্ষণ করে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান।


পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি বহুল প্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন।


ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা। এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়।


হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেক দোকানে আছে।


গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গনে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা।


ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা পয়লা বৈশাখ উদযাপনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নববর্ষারম্ভ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে নানান সংগঠনের উদ্যোগে প্রভাতফেরি আয়োজিত হয়।


বিগত বছরের চৈত্র মাসে শহরের অধিকাংশ দোকানে ক্রয়ের উপর দেওয়া হয়ে থাকে বিশেষ ছাড়, যার প্রচলিত কথ্য নাম 'চৈত্র সেল'। তাই, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এবং এই ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করতে সমস্ত মানুষ একমাস ধরে নতুন জামাকাপড়, বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করে।


বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে পুজোর জন্য প্রচুর ভিড় হয়। এইদিন বাঙালীরা পরিবারের মঙ্গল কামনা করে পুজো দেন।


এইদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রেওয়াজ প্রচলিত।


প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে এইদিন জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া হয়। ইলিশ, চিংড়ি, পাঁঠা, মুরগি-তে একেবারে ভরপুর পেটপুজো হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর আরও নানান দেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, ক্যানবেরাতে বৈশাখী মেলার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয়।


বর্ষশেষে নববর্ষ আগমন.........সবাকার হরষিত মন
শুভ নববর্ষ-১৪৩০ নববর্ষের কবিতা (অষ্টম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


নববর্ষে নবরাগে ফুটিল কুসুম বাগে
নতুন প্রভাত আজি জাগে,
ফুটিল কুসুম কলি ধেয়ে আসে যত অলি
দেহে মনে নব রং লাগে।


নববর্ষে নব সাজে পায়েতে ঘুঙুর বাজে
হাতে হাত ধরি নাচে সবে,
কিশোরীরা গাহে গান মেতে উঠে মনপ্রাণ
হাসি খুশি আর কলরবে।


নতুন পোশাক পরি আজি সারাদিন ধরি
ছোটরা সভামঞ্চের কাছে,
ছোট ছোট শিশুসব তুলি নানা কলরব
মহানন্দে হাত তুলি নাচে।


অজয় নদীর চরে শালিকেরা খেলা করে
সোনা রোদ ঝরে নদীজলে,
লিখিল লক্ষ্মণ কবি নব বর্ষে নব ছবি
কবির কবিতা কথা বলে।