হিন্দু ধর্মে প্রতি মাসে শিবরাত্রি (Shivratri) পালন করা হয়। কিন্তু ফাল্গুন কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত মহা শিবরাত্রির (Maha Shivratri) বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সারারাত জেগে উপবাস করে ভক্তরা চার প্রহরে দেবাদিদেবের মাথায় জল ঢালেন। কথিত আছে চার প্রহরে আরাধনার মাধ্যমে ভোলেনাথ ব্যক্তি জীবনের দুঃখ, কষ্টে, সংকট, সমস্যা সব  দূর করেন। ২০২৩ এর মহা শিবরাত্রি পড়েছে ১৮ই ফেব্রুয়ারি। প্রত্যেক প্রহরে দেবাদিদেবের মাথায় ভক্তরা একটি করে ফল নিবেদন করে জল অর্পণ করেন। পাশাপাশি ঘি, দই, দুধ দিয়ে শিবকে অভিষেক করার রীতি রয়েছে।


শিবরাত্রি দিন সকালে উঠে প্রথমে স্নান করে শুদ্ধ বসনে পুজো আর উপবাসের সংকল্প গ্রহণ করবেন। তারপর বাড়িতে কিংবা নিকটস্থ কোন শিব মন্দিরে গিয়ে শিব আর পার্বতীকে স্মরণ করে জলাভিষেক করবেন। এই শুভ যোগে চন্দনের প্রলেপ আর পঞ্চামৃত দিয়ে দেবাদিদেবকে অভিষেক করবেন। শিব মন্ত্র জপ করতে ভুলবেন না। এছাড়াও অভিষেক করার সময় ব্যবহার করতে পারেন ডাবের জল, গঙ্গাজল বা দুধ। ভোলেনাথের উদ্দেশ্যে অর্পণ করবেন বেলপাতা, অখন্ড চাল, আকন্দ, ধুতুরা প্রভৃতি ফুল। অর্পণ করতে পারেন যে কোনো সাদা ফুল আর অপরাজিতা। পুজো শেষে ঘুটে জ্বালিয়ে তাতে তিল, চাল আর ঘি মিশিয়ে আহুতি দেবেন। মহা শিবরাত্রিতে চার প্রহরের পুজোর নিয়মের সঙ্গে নানান প্রচলিত ধারণা রয়েছে। বলা হয় প্রথম প্রহরে পরপর চার বার দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করালে শুভ ফললাভ সম্ভব। দ্বিতীয় প্রহরে শিবলিঙ্গ অভিষেক করতে হয় দই দিয়ে। তৃতীয় প্রহরে শিবলিঙ্গ স্নান করানো উচিত ঘি দিয়ে। চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নানের নিয়ম রয়েছে।


শিব ও শিবের মহা মিলন হয়েছিল শিবরাত্রিতে, তাই এই দিনটি হয়ে ওঠে মহাশিবরাত্রি। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মা পার্বতী ভগবান শিবকে তার স্বামী হিসেবে পেতে ১০৭ টি জন্ম নিয়েছিলেন। হাজার বছরের কঠোর তপস্যার পর়ম জন্মে ভোলে বাবা পার্বতীকে অর্ধাঙ্গিনী রূপে গ্রহণ করেন। দেবী পার্বতী ভোলে ভান্ডারীর প্রেম ছাড়া প্রতি জন্মে কোনও সম্পদ, গৌরব চাননি। একই সময়ে, শিবজিও প্রতি জন্মে পার্বতীজির জন্য অপেক্ষা করতেন।


শিব চতুর্দশী আজি …….. শিবের বিবাহ
শিবরাত্রির কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহা শিবরাত্রি ব্রত খ্যাত চরাচরে,
মর্ত্ত্যবাসী জীব সবে শিবপূজা করে।
হরগৌরী একসাথে আসেন ধরাতে,
শিবের বিবাহ আজি, আজিকার রাতে।


পত্রপুষ্পে সুসজ্জিত দেবালয় মাঝে,
ঘৃতের প্রদীপ জ্বলে শঙ্খ ঘন্টা বাজে।
কুমারী সকলে হাতে আকন্দের মালা,
বিল্ব ধুতুরার ফুল প্রসাদের থালা।


শিবের মস্তকে দেয় দুগ্ধ গঙ্গাজল,
কমলা কদলী কুল নানাবিধ ফল।
উপবাসী থাকে সবে মাগে এই বর,
তোমা সম পতি যেন পাই মহেশ্বর।


মহা শিবরাত্রি কথা অপূর্ব কথন,
প্রতি বর্ষে হেরি এই মধুর মিলন।
শিবরাত্রি ব্রত কথা হল সমাপন,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।