শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। দিবসটিকে কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তীসহ নামেও অভিহিত করা হয়। পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই এ মহাবতার স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ধর্মগ্রন্থ গীতাও সেই সাক্ষ্য দেয়,………..


‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।
(জ্ঞানযোগ ৭/৮)


হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে এদিনে শুধু উপাবাসেও সাতজন্মের পাপ নষ্ট হয়। তাই এ দিনে উপবাসসহ শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয়। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অষ্টশত নাম পাঠ করা হয়।


শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রতকথা (ধর্মীয় কবিতা)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শুভ জন্মাষ্টমী তিথি পূণ্য শুভক্ষণ,
গীতিকাব্য লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।
দেবকীর গর্ভজাত অষ্টম নন্দন,
তাঁহার হস্তেতে হবে কংস নিধন।


ইহা শুনি কংসরাজা ভাবে মনে মনে,
আপন ভগিনী মম বধিব কেমনে?
তথাপিও কংসাসুর মহা ক্রোধমন,
দেবকী সম্মুখে আসি দিল দরশন।


মথুরার কংসরাজা অতি দুরাচার,
বধিবে সে দেবকীরে প্রতিজ্ঞা তাঁহার।
দ্রুত বেগে আসে ধেয়ে তরবারি হাতে,
কাটিবে দেবকী শির অসির আঘাতে।


বসুদেব বলে শুন আমার বচন,
দেবকীর শিরচ্ছেদ কর কি কারণ?
শুনহ বচন মোর কংস মহারাজ,
আমার বচন শুন কর এক কাজ।


দেবকীর গর্ভজাত সকল তনয়,
সমর্পিব হস্তে তব কহিনু নিশ্চয়।
ইহা শুনি রাজা তবে হইল সদয়,
তথাপিও তার মনে জাগিল সংশয়।


মোর কারাগারে বন্দী থাকিবে দুজনে,
সশস্ত্র প্রহরী রত রবে সর্বক্ষণে।
একে একে সপ্ত শিশু জন্মিল যখন,
বসুদেব সপ্ত শিশু করে সমর্পন।


আছাড়িয়া মারে কংস তাঁহার সম্মুখে,
দেখিতে না পারে বসু কাঁদে পুত্রশোকে।
শুভ জন্মাষ্টমী তিথি পূণ্য শুভক্ষণ,
জন্মিল দেবকী গর্ভে অষ্টম নন্দন।


কারাগারে জন্ম নিল শ্রীকৃষ্ণ যখন,
কারারক্ষী সব ছিল ঘুমে অচেতন।
কৃষ্ণকোলে বসুদেব ধাইল তথায়,
উপনীত হল আসি তীরে যমুনায়।


শ্রাবণে বাদলধারা ঝর ঝর ঝরে,
বিজুলি ঝলসি উঠে অম্বরে অম্বরে।
বসুদেব নামি পড়ে যমুনার জলে,
শৃগালে দেখায় পথ অগ্রে অগ্রে চলে।


মুষল ধারায় বৃষ্টি অবিরাম ঝরে,
বাসুকি ধরিল ফনা মস্তক উপরে।
যমুনার পারে আছে নন্দের ভবন,
নন্দের ভবনে বসু করে আগমন।


কৃষ্ণপেয়ে মহানন্দে মাতে নন্দজায়া,
বসুদেবে সমর্পিল আপন তনয়া।
কারাগারে আসি পুনঃ হইল নির্ভয়,
দেবকীরে বসুদেব সবিশেষ কয়।


কারাগৃহে আসে যবে কংস দুরাচার,
বসুদেব দেয় তবে সন্তান তাঁহার।
লহ কংস এই মোর অষ্টম সন্তান,
অন্যথা না হবে কভু করিনু প্রদান।


আছাড়ি মারিতে যবে কংস করে মন,
গগনেতে উঠি কহে- শুনহ রাজন।
তোমারে বধিবে যেবা বাড়িছে গোকুলে,
নিশ্চয় তোমারে বধ করিবে সমূলে।


মথুরায় কংসরাজা মহা দুরাচার,
আমার হস্তেতে কেহ না পাবে নিস্তার।
শিশু কৃষ্ণ শত্রু মম ইহার কারণ,
আমার আদেশে হবে তাহার নিধন।


পুতনারে আদেশিল শুনহ বচন,
ছয় মাস বয়সের যত শিশুগণ।
আসিবে সবারে তুমি করিয়া নিধন,
সবার মুখেতে দিবে বিষমাখা স্তন।


কৃষ্ণেরে ধরিয়া রাখে পুতনা যখন,
কৃষ্ণমুখে দিল তার বিষভরা স্তন।
দন্তেতে কাটিল কৃষ্ণ স্তন দুটি তার,
শিশু কৃষ্ণ প্রাণনাশ করে পুতনার।


অবশেষে মল্লযুদ্ধে করিল আহ্বান,
মথুরায় আসে তবে কৃষ্ণ বলরাম।
মথুরা আসি কংসে করিল নিধন,  
স্বর্গরাজ্যে খুশি হয় যত দেবগণ।


মথুরায় কংস বধ হইল যখন,
স্বর্গেতে দেবতা করে পুষ্প বরিষণ।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মকথা শুন দিয়া মন,
জন্মাষ্টমী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।