দোল পূর্ণিমার পৌরাণিক কাহিনী (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
তথ্যসূত্র: বাংলা লাইভকম


আমাদের ধর্মে অনেকরকমের যাত্রা রয়েছে। স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, রাসযাত্রা, ঝুলনযাত্রা আর দোলযাত্রা। বৈষ্ণবমতে ফাল্গুণী পূর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের দোলযাত্রা, শ্রাবণী পূর্ণিমায় ঝুলনযাত্রা আর কার্তিক পূর্ণিমায় রাসযাত্রা। সম্ভবতঃ শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রায় দোলনায় দোলা দেওয়া থেকেই দোলের নামকরণ। দোল বা হিন্দোলনের অর্থ হল সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলনময় মানুষের জীবনে একচিলতে আনন্দ খুঁজে নেওয়া। পেন্ডুলামের মত চলমানতায় ভরা আমাদের জীবনে একবার দুঃখ আবার তারপরেই সুখ। কখনও বিরহ, কখনও মিলন। কখনও আনন্দ, কখনও বিষাদ। স্থির হয়ে থাকাটা জীবন নয়। এই দোলনার আসা ও যাওয়াটি রূপকমাত্র। তাই জন্যেই তো বলে “চক্রবত পরিবর্ততে সুখানি চ দুখানি চ।’


উপনিষদে বলে “আনন্দ ব্রহ্মেতি ব্যজনাত” অর্থাত ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ। কিন্তু তিনি একা সেই কাজ করবেন কী করে? তাইতো তিনি সৃষ্টি করেন বন্ধু-বান্ধব, পিতামাতা, দাসদাসী, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্কের জালে আবদ্ধ মানুষদের। প্রেমের আবাহনে পুরুষ আর প্রকৃতির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠে রাস, ঝুলন বা দোলের মত উত্সব। সম্পর্ক টিঁকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রজাপিতার এরূপ দায়বদ্ধতা। মানুষকে নিয়ে মানুষের যাপন। সেখানেই দোলযাত্রা নামক সম্মিলিত মিলনোত্সবের সার্থকতা !


বাংলার দোল সারা ভারতে হোলি। এই হোলি কথাটা এসেছে ‘হোলাক’ বা ‘হোলক’ থেকে। ভালো শস্য উত্পাতদনের প্রার্থনায় এই উত্সদব শুরু করেছিল মানুষ। তখন জ্বালানো হত ‘অজন্মা’ দৈত্যের খড়। আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণে ঋতুচক্রের শেষ উৎসব বসন্তের দোল। অবাঙ্গালীদের হোলিও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির উত্থানের ইতিহাস। এই রঙ উৎসবের আগের দিন ধুমধাম করে তাদের ‘হোলিকা দহন’ আর বাংলায় বৈষ্ণব প্রাধান্য রীতি অনুযায়ী চাঁচর বা ন্যাড়াপোড়া (মেড়াপোড়া)। পরের দিন রঙ খেলা। কিংবদন্তী বলছে বাসন্তী পূর্ণিমার এই দিনে কৃষ্ণবধের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ দানব দীর্ঘকেশ কেশী কে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন। মথুরা, বৃন্দাবনের মধ্যে প্রবাহিত যমুনার কেশীঘাটে এই কেশী নামক অসুরকে পরাজিত ও বধ করে কৃষ্ণের নাম হয় কেশব। আর ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী দোর্দণ্ডপ্রতাপ কেশী বধের আনন্দেই হোলি উত্সব।


চাঁচর উত্সবের তাৎপর্য কিছুটা পরিবেশ ভিত্তিক। বর্ষশেষের শুকনো গাছের ডালপালা, লতা গুল্ম একত্র করে লম্বা চোঙের মত বেঁধে পূর্ণিমার আগের রাতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। যেন পাতাঝরা ঋতু শেষের সব আবর্জনা, গ্লানি মুছে যাক, শুচি হোক ধরিত্রী। পরিবেশের বাৎসরিক ধৌতিকরণ। পুরাণে এই আচারের নাম ‘হোলিকাদহন’। বাংলায় ন্যাড়াপোড়া বা চাঁচর। হোলিকার অর্থ ডাইনি। চাঁচর শব্দের অভিধানিক অর্থ হল কুঞ্চিত বা কোঁকড়া। কীর্তনের পদকর্তা চণ্ডিদাস লিখলেন, “চাঁচর কেশের চিকন চূড়া”।


হোলিকা দহনের উৎস হল পিতাপুত্রের চিরাচরিত ইগোর দ্বন্দ। ধর্মান্ধতার ইগো। বাবা স্বৈরাচারী দৈত্য রাজা হিরণ্যকশিপু আর ছেলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ ধন্য প্রহ্লাদ। বাবা বিষ্ণু বিরোধী দাপুটে রাজা তাই তাঁকে মানতেই হবে। পুত্র ঠিক উল্টো। বিষ্ণুর সমর্থক, বিষ্ণু অন্ত প্রাণ।
এদিকে তখন কশ্যপমুনির স্ত্রী দিতির দুই পুত্র। দৈত্য হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সমগ্র দেবকুল তখন সন্ত্রস্ত। বিষ্ণু বধ করলেন হিরণ্যাক্ষকে। হিরণ্যকশিপু ভ্রাতৃহন্তা বিষ্ণুর ওপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠল। মন্দার পর্বতে কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার বর পেল যে দেব, দৈত্য, দানব কেউ তাকে বধ করতে পারবেনা।


হিরণ্যকশিপুর আপন দেশে বলবত্‌ হল নতুন আইন। কেউ বিষ্ণুপুজো করতে পারবেনা। এদিকে তার ছেলেই তো পরম বৈষ্ণব। অতএব ছেলেকে সরাও পৃথিবী থেকে। যে কেউ মারতে পারবেনা প্রহ্লাদকে। রাজ্যের সব বিষ্ণুভক্তকে তিনি শূলে চড়িয়ে মৃতুদন্ড দিয়েছেন। কিন্তু ছেলের বেলায় কী করবেন? বুদ্ধি খাটালেন বাবা। সুইসাইড বম্বার চাই তাঁর। বাবার হোলিকা নামে দুষ্টু পাজী এক বোন ছিল। হোলিকার কাছে ছিল মন্ত্রপূত এক মায়া-চাদর বা ইনভিজিবল ক্লোক। অতএব হোলিকাকে কাজে লাগানো হল আত্মঘাতী মারণাস্ত্র হিসেবে।


প্রহ্লাদ বধের জন্য তৈরি হল এক বিশেষ ঘর যেখানে হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে বসল । আগুন জ্বালানো হল এমন করে যাতে ঐ মায়া চাদর হোলিকাকে রক্ষা করবে আর প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে মরে যাবে। কৌশল, ছলনা সবকিছুর মুখে ছাই দিয়ে মাহেন্দ্রক্ষণ আসতেই অগ্নি সংযোগ হল। মায়া চাদর হোলিকার গা থেকে উড়ে গিয়ে নিমেষের মধ্যে প্রহ্লাদকে জাপটে ধরল। হোলিকা পুড়ে ছাই হল আর প্রহ্লাদ রয়ে গেল অক্ষত।


পুরাণের এই হোলিকা দহন বা আমাদের আজকের ন্যাড়াপোড়া বা বুড়ির ঘর জ্বালানো হচ্ছে অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতিক আর পরেরদিনে দোল উত্সবে আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে শুভ শক্তিকে বরণ করা। অথবা যদি ভাবি বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে? বসন্তে ঋতু পরিবর্তনে রোগের বাড়াবাড়িকে নির্মূল করতে এই দহনক্রিয়া? আর সামাজিক কারণ হিসেবে শীতের শুষ্ক, পাতাঝরা প্রাকৃতিক বাতাবরণকে পুড়িয়ে সাফ করে কিছুটা বাসন্তী ধৌতিকরণ ।


সে যাইহোক দোল পূর্ণিমার আগের রাতে খেজুরপাতা, সুপুরিপাতা আর শুকনোগাছের ডালপালা জ্বালিয়ে আগুনের চারপাশে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের মহা উত্সাহে নৃত্য করে করে গান গাওয়াটাই এখন সামাজিক লোকাচার।


বসন্তের দোল পূর্ণিমা .......... ফাগুনের রং লাগে
বসন্ত উত্সব-২০২৩ (পঞ্চম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বসন্তের উত্সবে আজি রং খেলা হবে
গাও সবে বসন্তের গান,
আজি দোল পূর্ণিমায় এস সবে নাচি গাই
মাতিয়া উঠুক সব প্রাণ।


আবীর রাঙানো হোলি বসন্তের দিনগুলি
সবার হৃদয়ে রং লাগে,
সব কিছু ভুলে যাই কোন স্মৃতি মনে নাই
বসন্তের দিন মনে জাগে।


একসাথে সবে মিলে সকলেই রং খেলে
সকলেই রং মাখে গায়,
হাসি গান কলরবে আনন্দেতে মাতে সবে
আবীর রঙে গগন ছায়।


সারাদিন রং খেলা কেটে যায় সারা বেলা
অজয় নদীর রং লাল,
লিখিল লক্ষ্মণ কবি আবীর মাখানো ছবি
স্মৃতি রয়ে যায় চিরকাল।


----------------------------------------
**** বৈচিত্র্যের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে যাও।   সবারে করি আহ্বান।
সবাইকে জানাই পবিত্রতম দোল পূর্ণিমার রঙিন শুভেচ্ছা।****
----------------------------------------
দোল পূর্ণিমার কবিতা
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
1. https://www.bangla-kobita.com/po123/khelbo-holi-rong-lagabo/
কণ্ঠে- শতাব্দী রায় চৌধুরী


2. https://www.facebook.com/watch/?v=273165924860176
কণ্ঠে- ত্রিষাণের


3. https://www.youtube.com/watch?v=xAxYgD_gNbQ
কণ্ঠে- পায়েল


4. https://youtu.be/VDohdvQuPSM
কণ্ঠে- সৃঞ্জন


5. https://www.youtube.com/watch?v=YXkB7Dr5hdQ
কণ্ঠে- স্বাতী দে


6. https://www.youtube.com/watch?v=0w7agy6fw_Y
কণ্ঠে- বিদ্যুত্ দাস


7. https://www.youtube.com/watch?v=L8ea3KmFfH8
কণ্ঠে- উপাসনা


8. https://www.youtube.com/watch?v=2qE0OH4sd5o
কণ্ঠে- প্রার্থিতা ভট্টাচার্য
9. https://www.youtube.com/watch?v=1H300CwKNLw
কণ্ঠে- সৃঞ্জয়
10. https://www.youtube.com/watch?v=-CuCvMTqXak
কণ্ঠে- মণীষা