শুভ বিজয়া দশমী ............... দেবী বিসর্জন
আবার আসিও মা পুনর্বার (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


দুর্গাপূজার অন্ত চিহ্নিত হয় 'বিজয়া দশমী'-র মাধ্যমে। তাই 'দশমী' কথাটির মধ্যেই রয়েছে আবেগ, কষ্ট। ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গা স্বামীগৃহ ছেড়ে সপরিবারে এসেছিলেন পিতৃগৃহে। আজ দশমী তিথিতে দেবী আবার পাড়ি দেবেন কৈলাসে। আজকের দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় এবং শুরু হয় আবার এক বছরের অপেক্ষার পালা।


'দশমী' কথাটির সাধারণ অর্থ খুবই সহজ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসের দিকে। সেই কারণেই এই তিথিকে 'বিজয়া দশমী' বলা হয়। কিন্তু দশমিকে বিজয়া বলা হয় কেন? তার কারণ খুঁজতে গেলে অনেক পৌরাণিক ব্যাখ্যা উঠে আসবে সামনে। পুরাণে মহিষাসুর বধ কাহিনীতে লেখা রয়েছে,মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দুর্গা। নারী শক্তির এই জয়লাভকেই 'বিজয়া' বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আবার, শ্রী চণ্ডীর কাহিনী অনুসারে, দেবী আবির্ভূত হন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী-তে। মহিষাসুর বধ করেন শুক্লা দশমীতে। তাই দশমীতে এই বিজয়কেই চিহ্নিত করে বলা হয় 'বিজয়া দশমী'।


আজকের এই বিজয়া দশমীর দিনে উত্তর ও মধ্য ভারতে উদযাপিত হয় দশেরা। যদিও তার তাৎপর্য কিছুটা আলাদা। সংস্কৃত শব্দ 'দশহর' থেকে 'দশেরা' শব্দটির উৎপত্তি। যা সূচিত করে দশানন রাবণের মৃত্যু-কে। বাল্মিকী রচিত রামায়ণে কথিত, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতেই রাবণ বধ করেছিলেন রাম। রাবণ বধের পর ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন সস্ত্রীক রামচন্দ্র। তাই এই দিনটিকে দশেরা বা দশহরা হিসেবে পালন করা হয় উত্তর ও মধ্য ভারতের কিছু জায়গায়। কিন্তু, মাইসোর দশেরা পালন করা হয় দেবী দুর্গার মহিষাসুরকে বধ করার স্মরণে। হাজারো পৌরাণিক ব্যাখ্যা। হাজারো পৌরাণিক মতামত। এসব কিছুকেই উপেক্ষা করে বাঙালি কিন্তু মেতে ওঠে শুধুমাত্র দুর্গাপুজো নিয়ে। আজ এই পুজোর অবসান। প্রত্যেকের চোখে জল।


দেবী দুর্গার বিদায় দিনে বিষাদের সুরেই 'বিজয় দশমী' পালন করেন মর্ত্যবাসীরা। মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়, চলে একে অপরকে আলিঙ্গন ও মিষ্টিমুখ। বিশ্বসংসারে ছড়িয়ে পড়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা। 'আসছে বছর আবার হবে' এই আশা নিয়েই মহামায়াকে বিদায় জানান শতকোটি মর্ত্যবাসী। শেষ হয় দেবী বিসর্জনের পালা।


দেবী মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় ভেসে আসে দেবী মা দুর্গার বিদায়ের সুর।


বাংলা কবিতা আসরের সকল কবি ও সহৃদয় পাঠকগণকে জানাই শুভ দুর্গাপূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!!!


বিসর্জনের বাজনা বাজে ...... দেবী বিসর্জন
একটি বছরের প্রতীক্ষা আবার (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


দেবী বিসর্জন হয় অজয়ের ঘাটে,
পশ্চিমে রঙিন হয়ে সূর্য বসে পাটে।
ঢাকীরা বাজায় ঢাক বাজিছে কাঁসর,
দলে দলে আসে সবে অজয়ের চর।


পূজার সানাই বাজে লাগে সুমধুর,
বিসর্জনে বাদ্য বাজে বিষাদের সুর।
বিসর্জনে থেমে যায় যত কোলাহল,
মায়ের তরে সবার চোখে আসে জল।


প্রতিমা লইয়া সবে নেমে পড়ে জলে,
জয় জয় দুর্গামাতা সকলেই বলে।
শঙ্খধ্বনি জয়ধ্বনি মহা কোলাহলে,
প্রতিমা ভাসান হয় অজয়ের জলে।


আবার আসিও মাগো সকলেই কয়,
প্রতীক্ষায় রব মোরা কহিনু নিশ্চয়।
বিদায়ের অশ্রুজলে হয় অবসান,
বিসর্জন কাব্য লিখে লক্ষ্মণ শ্রীমান।