ছট, লোকবিশ্বাসের একটি মহান উৎসব, প্রতি বছর পালিত হয়। ছট উৎসবকে বিশ্বাসের একটি মহান উৎসব বলে মনে করা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ছঠি মাইয়াকে পূজা করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ছট পূজাকারী ভক্তরা সুখ, সমৃদ্ধি, ধন, যশ ও সম্মান লাভ করেন।


কথিত আছে যে এই উপবাস পালনকারী মহিলাদের সন্তানেরা দীর্ঘায়ু এবং সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ করে। এর পাশাপাশি এই উপবাস পালন করলে সুস্থ জীবনের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। ছট উৎসব ভারতের কয়েকটি কঠিন উৎসবের মধ্যে একটি যা ৪ দিন ধরে চলে। এই উৎসবে ৩৬ ঘন্টা উপবাস রেখে সূর্য দেবতা ও ছঠি মাইয়াকে পূজা করা হয় এবং তাদের অর্ঘ্য দেওয়া হয়।


ইচ্ছা পূরণের জন্যও এই উপবাস করা হয়। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই উপবাস পালন করেন। কার্তিক মাসের চতুর্থী তিথিতে স্নান, দ্বিতীয় দিনে খরনা এবং তৃতীয় দিনে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। চতুর্থ দিনে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে উপবাস ভাঙে। আসুন জেনে নিই কবে ছট উৎসবের সূচনা।


কার্তিক শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে ছট মহাপর্বের প্রথম প্রথা অনুসরণ করা হয়। কার্তিক শুক্লপক্ষের চতুর্থীতে স্নান ও আহার পালিত হয়। এই প্রথা অনুযায়ী প্রথমে ঘর পরিষ্কার ও শুদ্ধ করা হয়। এরপর বিশুদ্ধ নিরামিষ আহার করে স্নান করে ছট পরবর্তী উপবাস শুরু হয়। উপবাসকারীরা খাওয়ার পরই বাড়ির অন্য সদস্যরা খাবার গ্রহণ করে। নিয়মানুযায়ী, এই দিনে ভাত, লাউ এর তরকারি এবং মসুর ডাল খাওয়া হয় এবং খাবারে শুধুমাত্র সন্দপ লবণ ব্যবহার করা হয়।


কার্তিক শুক্লা পঞ্চমীর দ্বিতীয় দিনে, ভক্তরা দিনব্যাপী উপবাস করেন এবং সন্ধ্যায় খাবার খান। একে 'খরনা' বলে। এই দিন প্রসাদ হিসেবে আখের রসে তৈরি চালের ক্ষীর, দুধ, চালের পিঠা ও ঘি দিয়ে তৈরি করা হয় চুপড়ি রুটি। এতে কোনো লবণ বা চিনি ব্যবহার করা হয় না। খীর খাওয়ার পর ৩৬ ঘন্টা উপবাস পালন করা হয়। খরনাতে শরীর ও মনের শুদ্ধিকরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।


কার্তিক শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিকে ছট পূজার প্রধান দিন বলে মনে করা হয়। সন্ধ্যায় সকল প্রস্তুতি ও আয়োজনের পর বাঁশের ঝুড়িতে অর্ঘ্য সাজানো হয় এবং অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য পরিবার ও পাড়ার সকলে উপোস সহ ঘাটের দিকে রওনা হয়। সকলে পুকুর বা নদীর তীরে সম্মিলিতভাবে অর্ঘ্য দান করেন।


ছট পূজার তারিখ


কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী তারিখ শুরু: ৩০ অক্টোবর সকাল ৫.৪৯ এ


কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠীর তারিখ শেষ হয়: ৩১ অক্টোবর রাত  ৩.২৭ এ


সূর্যাস্তের সময়: বিকাল ৫:৩৭


উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া হবে – ৩১ অক্টোবর  সোমবার


এই দিন  সকালে উদিত সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এই দিনে, ভক্তরা সূর্যোদয়ের আগে জলে দাঁড়িয়ে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে। অর্ঘ্য নিবেদনের পর মানুষ প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙে।
সূর্যোদয়ের সময়: সকাল ০৬.৩১ এ।


ছট পূজা ( সূর্য পূজা)
কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ছট পূজা উৎসবে ভারি ধূম হয়,
ছট পূজা কেহ কেহ সূর্য পূজা কয়।
সূর্যের পূজা সবাই করে ভক্তি ভরে,
উপবাসী থাকি হবে সূর্য পূজা করে।


দাড়িম্ব কদলী আর আখগাছ সাথে,
ফলমূল সুমিষ্টান্ন ডালা লয়ে মারে।
সরোবরে জলে নামি করে উপাসনা,
প্রত্যুষে সকলে করে সূর্যের বন্দনা।


রাত্রি কাটৈ ভোর হয়ে হয় সূর্যোদয়,
সূর্যের বন্দনা করি পূজা শেষ হয়।
ছট পূজা কাব্যমালা হলো সমাপন,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।