আমি নয় নম্বর কয়েদী (?)
(এক স্বাধীনতা সংগ্রামী কয়েদীর জবানবন্দী)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আমি নয় নম্বর কয়েদী!
আমার চারপাশে, জেলখানার উঁচু বিবর্ণ প্রাচীর।
আমি জেলে বন্দী হয়ে কাটিয়েছি আমার জীবনের
সুদীর্ঘ পঁচিশটা বছর।
আগামীকাল আদালতে আমার বিচার হবে।


তবে আজও আমাকে ওরা মারছে কেন?
কেন? কেন? কেন?
???


দুজন ব্রিটিশ সেনা আমাকে ধরে
আমার আঙুলে পিন ফুটিয়ে দিল।
“বন্দে মাতরম” বলে আকাশ বিদীর্ণ
চিত্কার করে উঠলাম।


“বন্দে মাতরম” ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে শোনা গেল
কুখ্যাত জেলখানার চার দেওয়ালের অন্তরালে।
তারপর ওরা এসে আমাকে
ইলেক্ট্রিক শক দিল
অসহ্য যন্ত্রণায় আমি
জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।


যখন জ্ঞান ফিরল, দেখলাম আমার চারদিকে
নিকষ কালো অন্ধকার।
আমি বুঝতে পারলাম
আমার চোখ দুটোকে উপড়ে ফেলা হয়েছে।
অনুভূতির আলোয় দেখতে পেলাম
সেই চোখদুটো স্বাধীনতার সূর্য দেখার
অপেক্ষায় ছটফট করছে।


আমার চোখে ওরা বেঁধে দিল কালো কাপড়।
পিঠমোড়া করে বেঁধে সারাটা রাত
ফেলে রাখল কয়েদখানায়।


অন্ধকারের রাত্রি শেষ। শুরু হল নতুন দিনের সূচনা।
আজ আমার বিচারের দিন।
আমার ভাগ্যবিধাতা,
ব্রিটিশ বিচারক আমার বিচার করবেন।
আমাকে আদালতে নিয়ে আসা হল।


কিন্তু একি! সবাই নিশ্চুপ কেন?
জানি না কি হবে।


তারপর বিচারক বললেন
“সমস্ত ঘটনার উপযুক্ত তদন্তের ভিত্তিতে
আমি অভিযু্ক্তকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করলাম”
আর একঘন্টা পরেই আমার ফাঁসি হবে।


আমাকে আনা হলো ফাঁসির মঞ্চে।
একটি মসৃণ কাঠের পাটাতন,
তার উপর দাঁড়িয়ে আমি।
........অদূরে দাঁড়িয়ে জল্লাদ!
জল্লাদ রশিতে টান দিলেন।


আর আমার প্রাণপাখি বুকের খাঁচা থেকে
বেরিয়ে গেল। বেজে উঠলো গানের সুর
“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।”
গানের করুণ সুরে শেষ হয়ে গেল
একটি রক্তমাখা অভিশপ্ত প্রভাত।


আগামীকাল
আবার যখন সূর্য উঠবে
তখন হয়তো আমি থাকবো না।
রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতা থেকে
মুছে যাবে নয় নম্বর কয়েদীর নাম।