আচ্ছা লিখতেই তো পারতাম ‘আসুন আমরা বাংলায় কথা বলি ‘| তা না লিখে  লিখলাম ' লেট আস টক ইন বাংলা ' |দূর ¡!লেখার মেজাজটাই নষ্ট করে দিলাম | কোথায় ভাবলাম একটাও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করব না | শুধু করব (আমরি) বাংলা ভাষা | যাক, ক্ষমা করে দিন এবারের মত | আসুন আমরা যতটা পারি বাংলাতে কথা বলি |
তর্কের অপেক্ষা রাখে না যে ইংরেজি সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা | এবং সেই ভাষাকে সম্মান জানিয়েই বলি আমরা আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে তাই বলে বিলুপ্ত হতে দেবনা | যেমন না ব্যবহার করে করে সংস্কৃত ভাষা বিলুপ্ত হতে চলেছে | আমিও জানি  আপনিও জানেন যে  ইংরেজী থেকে শব্দ আর ভাব আহরণ করলে কোনও অনিষ্ট হবে না। কিন্তু যা আমাদের আছে তাকে অবহেলা করে যদি বিদেশী শব্দ বা বাক্যের ব্যবহার করি তাহলে আমাদের মাতৃভাষার দৈনতা প্রকাশ পাবে |  


বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কথায় ---- বাবু কে ? " যাঁহার স্নানকালে তৈলে ঘৃণা, আহারকালে আপন অঙ্গুলিকে ঘৃণা এবং কথপোকথন কালে মাতৃভাষাকে ঘৃণা, তিনিই বাবু"


এটা ঠিকই ভাষা মনের ভাব প্রকাশের বাহন। স্থানের প্রভেদে সাধারণ কথাবার্ত্তার প্রভেদ দেখা যায়। তবে একটা ব্যাপারে একমত হওয়া যায় যে তথাকথিত অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত যাঁরা গ্রামে থাকেন তাঁরা বিদেশী শব্দের প্রভাব থেকে মুক্ত হ'লেও নগরের শিক্ষিতরা বিদেশী শব্দ ব্যবহার এড়িয়ে চ'লতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের যে ইংরাজী ভাষাতে বেশ দখল আছে তাও নয় |অনেক সাধারণ শব্দের মানে তাঁদের জানা নেই | এই রকম কোন ছাত্রকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন--'তাইতো রে, তোর তো খুব মুশকিল হ'লো। তুই ইংরিজীটাও শিখলি না এদিকে বাঙলা ভুলে গেলি'।
প্রথমে দেখি বাঙলা ভাষার বদলে অন্য ভাষার শব্দ কী ভাবে আমাদের মুখে চলে আসে | আসলে এটা আমাদের কুঅভ্যাস বলতে পারেন |আমাদের অজান্তেই অনেক সময় ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে আসে |একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধে হবে | হঠাত্ একটি আড্ডায় ঠিক হ'ল ইংরাজী শব্দ ব্যবহার না করে শুধু বাঙলা ভাষায় একটানা কথা বলতে হবে।মজা করে একটা প্রতিযোগিতা হয়ে গেল|  যে একটিও ইংরাজী শব্দ শেষ পর্যন্ত ব্যবহার না করবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে |কেউ একটি ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করলে বাদ পড়ে যাবে। খেলা চলছে, একটি একটি করে প্রতিযোগী খসে পড়ছে। একজন ছাড়া যখন আর সকলে বাদ হয়ে গেল, যে জিতলো উত্তেজনায় বলে ফেলল 'আমি ফার্ষ্ট'-- হায় রে 'প্রথম' শব্দটা মুখে এল না।
এমনকি গণ যোগাযোগের মাধ্যমগুলি যেমন পত্রিকা , দুরদর্শন অনেক জায়গাতেই নামকরা সাহিত্যজীবী রাও অকারণে ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করেন | একজন প্রসিদ্ধ সাহিত্যজীবি বার বার  'problem' শব্দটি ব্যবহার করলেন তার ভাষণে অথচ  'সমস্যা' শব্দটা তাঁর ঠোঁটের ডগায় এল না। যুত্সই বাঙলা শব্দ থাকা স্বত্বেও অনেকেই ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করে থাকেন |আমরা কত ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করি সাধারণ বিষয়েও। আমরা 'breakfast' করি 'জলখাবার' ভুলেই গেছি। আমদের 'বর' বা বউ হয় না-- থাকে 'husband' বা 'wife'। হাজার হোক, 'after all' না বললে কি করে বোঝাই আমরা শিক্ষিত। 'ইতিমধ্যে' বললে কি শ্রোতা বুঝবে 'already' বলতে চেয়েছি। 'এসো' বা 'আসি' এই দুটি শব্দের বদলে 'easily' অর্থাত্ 'সহজে' মুখে আসে 'bye' |
বাঙলা ভাষায় বিদেশী শব্দ ক্ষেত্রবিশেষে থাকতেই পারে। আমাদের জীবনে যে জিনিষ আমাদের কাছে বাইরে থেকে এসেছে তার নাম এবং নামবাচক শব্দটি বাইরে থেকে আসবে স্বাভাবিক ভাবে; এতে কোন বিবাদ- বিরোধ নেই। Police তো ইংরেজ শাসনের ফল তাই শব্দটাও আমাদের কথা-বার্তায় ঢুকে গেল-- বানানটাও আমাদের মত করে নিলাম 'পুলিস'। সেই রকম ইংরেজ শাসনপ্রথার আমদানী 'hospital' আমাদের জীবনে ঢুকেছে হাসপাতাল হয়ে।কিছু  উদাহরণ দেয়া যেতে পারে যা সহজেই আমরা বর্জন করতে পারি |
code of conduct--'আচরণবিধি'-
particularly---'বিশেষ করে'
অন্য angle থেকে--'অন্য ভাবে'-
undesirable'---'অনভিপ্রেত'
intervention---'হস্তক্ষেপ'
আর একটা উত্পাত শুরু হয়েছে বাংলা চলচিত্রে | দিন দিন যেন ইংরাজি শব্দের ব্যবহার বেড়েই চলেছে | ইংরাজি শব্দ না থাকলে যেন ওই চলচিত্র বাজারে খাবেনা | এছাড়া যেকোনো জমায়েতে যান মনে হয় যেন ইংরাজি শব্দ ব্যবহার না করলে সমাজে মান থাকবেনা | আমার মনে হয় ইংরাজি শব্দের ব্যবহার প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে কম দেখা যায় | দীর্ঘদিন মার্কিন দেশে থাকার পরে একটা উপলব্ধি আমার হয়েছে যাতে আমি খুব উত্সাহিত বোধ করি  | এখানে  যেসব বাঙালি পরিবার আছেন তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করেছি যে তাঁদের ছ্লেমেয়েদের বাংলা শেখানোর ব্যাপারে তাঁরা খুব আগ্রহী |


আমি আপনাদের টিচার হিসেবে বলছি না, as a friend হিসেবে বলছি, এই বলে লেখার ইতি টানলাম | এই যাঃ দেখুন এত জ্ঞান দেবার পরে নিজেই ওপরের দুটো বিদেশী শব্দ ব্যবহার করে ফেললাম | মাফ করে দেবেন | এই বদভ্যাস যে কবে যাবে জানিনা |