কত কাল ধরে চোখে জল, কত কাল ধরে বেদন,
কত কাল ধরে অত্যাচার, কত কাল ধরে শোষণ।
কত কাল ধরে অপেক্ষা, কত কাল ধরে ক্ষোভ,
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, কত কাল ধরে রোদ।


ঢাকার আকাশে অগ্নি জ্বলে উঠেছে,
সাতই মার্চ, সূর্য নয়, রক্তিম অগ্নিকাণ্ড।
হাওয়ায় দপদপানি, গাছের পাতায় কান্না,
মাটির শহরে কী এক আশা, কী এক বেদনা।


সকালের সূর্য লাজুক, লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে,
কিন্তু জনতা জমাট, ময়দানে ঢেউ খেলে চলে।
বাংলা মায়ের কোলে কোলে, লাখো লাখো মানুষ,
এক মুখেই ধ্বনি, "মুজিব! মুজিব!"


ঢাকার বুকে লেগেছে আগুন,
বাংলার চোখে জ্বলে উঠেছে বিদ্রোহের সূর্য।
মঞ্চের সামনে শুভ্র পায়রা,
বাতাসে লেগে আসে স্বাধীনতার গন্ধ।


কবির কবিতা নয়, শিল্পীর চিত্র নয়,
এই দিন লিখছে ইতিহাস, নিজের কলমে লেখা কথা।
হাজার বছরের দাসত্বের শিকল ভাঙতে,
বাঙালি জাতি আজ দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে।


হঠাৎ...


জনগণের মুখে এক নিশ্বাস,
মঞ্চে আসেন বঙ্গবন্ধু, সোনালি রোদের মতো ঝলমলে।
নিঃশব্দ কয়েক মুহূর্ত, তারপর
মাইক্রোফোনে গর্জে ওঠে ঐতিহাসিক সেই ভাষণ।


"আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।"
কথাগুলো ঝড়ের মতো ছুটে যায় জনতার মাঝে,
শত শত বছরের অভিমান, জ্বলে ওঠে বুকে।


"আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন।"
শব্দে শব্দে জাগে ঐতিহাসিক নির্যাতনের কাহিনী,
মা, বোন, মেয়েদের চোখের জল, শহিদদের রক্তাক্ত মাটি।


"আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে..."
শহরের নাম উচ্চারণে কাঁপে জনগণের হাত,
বেদনার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।


"আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।"
ধানের শীষ, নদীর স্রোত, মেঘের গর্জন,
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মিশে গায় স্বাধীনতার গান।


"সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।"
মঞ্চের নিচে, মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসা শিশু,
তার চোখে জ্বলে ওঠে অপার বিশ্বাস।


"আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।"
বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ, আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দেয়,
কান্না মিশে যায় স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞায়।


"এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্।"
স্বপ্নের দেশে, স্বাধীনতার গান,
গাইবে সকলে, হবে না আর কোন অভিমান।
মুক্তির আকাশে, উড়বে রঙিন পাখি,
এ দেশের মানুষ, হবে সুখী।


"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
যে কথা শতাব্দীর বন্দী, শৃঙ্খলে জড়িত স্বপ্ন,
সেই কথা বাজল বাঁশিতে, বীরের অগ্নি-কণ্ঠে।
প্রতিটি শব্দ, মুক্তির মন্ত্রের মতো জপে জনতা,
ঊর্ধ্বগত হাত, করে শপথ, জেগেছে স্বাধীনতার প্রভাত।
এই আহ্বানে বুক ঝনঝন করে, রক্তে জোয়ার আসে,
স্বাধীনতার সুর গেয়ে ওঠে, আকাশে ধ্বনি বাঁধে।


সূর্য উঁকি দেয় মেঘের ফাঁক দিয়ে,
রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার আকাশে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু, হাত বাড়ান ঊর্ধ্বে,


"জয় বাংলা!"
"জয় বাংলা!"


ধ্বনি ঢেউয়ে ঢেউয়ে ছুটে চলে চার দিকে,
স্বপ্নের ডানায় ঝরে পড়ে এক মুঠো নক্ষত্র,
জ্বলন্ত আকাশে লেখা হয় অসমাপ্ত কবিতা,
ভাঙা তবলার সুরে গাওয়া হয় বিদ্রোহের গান,
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা।


শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, নারী - সবাই এক সাথে,


"জয় বাংলা!"
"জয় বাংলা!"


হাতে হাত, মিলে কাঁধ, প্রতিজ্ঞার পথে এগিয়ে চলে,
স্বাধীনতার সূর্য, উঠবে ঢাকার আকাশে।
মঞ্চের চারপাশে ঢেউ খেলে জনতা,


"মুজিব! মুজিব!"
"মুজিব! মুজিব!"


বাংলার মুক্তির স্বপ্ন, আর থামানো যায় না,
সাত মার্চের এই ঐতিহাসিক দিন,
লিখে দিল বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন পাতা।


ঢাকার আকাশে সূর্য জ্বলজ্বলে,
স্বাধীনতার সোনালি আলোয় জেগেছে জনতা।


চোখে জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন, মুখে মুক্তির গান,
বঙ্গবন্ধুর অগ্নিমন্ত্রে আজ দীক্ষিত সব প্রাণ।
হৃদয়ে সাহসের নেশা, হাতে বীরের তলোয়ার,
শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বাধীনতার নতুন দ্বার।


অদূরে, অস্পষ্ট আলোয় ঝলমলে,
স্বপ্নের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার নগরে।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে, বীরের বীণায়, বাজে মুক্তির সুর,
স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে, বাংলাদেশ চলেছে দূর।


কত যুদ্ধের রণক্ষেত্র, কত রক্তের নদী বয়েছে,
কত স্বপ্ন ভেঙে গেছে, কত আশা ধূলিসাৎ হয়েছে।
কিন্তু বাঙালির মহাকাব্যে বিজয়ের শঙ্খ বাজে,
বাংলাদেশের আকাশে স্বাধীনতার সূর্য জ্বলে।


ভোরের সবুজ ঘাসে ঝিলিক দেয় শিশির বিন্দু,
সোনালী রোদে ঝলমলে নবীন ধানের ক্ষেত।
নদীর তীরে, শ্যামল বনানী,
কুহুতানে মুখরিত, পাখির কলতানে।


মুক্তির আনন্দে আজ গান গায় কৃষক,
শ্রমিকের মুখে হাসি, উৎসবের আবেশে।
শিশুরা স্বাধীন আকাশে উড়ায় ঘুড়ি,
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলি।


বিস্ময়ের ডানায় উড়ে যাই, অসম্ভবের নীড়ে বসি।
স্বপ্নের চেয়েও সত্যি, বাংলাদেশের এই স্বপ্ন-ভূমি।