একজন কবি নিজেকে এবং নিজের চারিপাশকে কবিতার মাধ্যমে অন্যের চোখে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পায়।  কবিতা লেখার মাধ্যমে কবি তার সকল স্তরের প্রেম- ভালবাসা, দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্না, মান-অভিমান আর পাওয়া না পাওয়ার মাঝে নিজেকে প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে একটু অন্য রকম জগতে আবিষ্কার করে। এর পর ভাষাহীন শারীরীক ও মানসিক কষ্ট-যন্ত্রণাকে একান্ত সাথে নিয়ে কবি তার কবিতার জন্য কলম ধরে। কলম, মন আর অনুভুতি এক হয়ে গেলে কবি তখন দৈহিক থেকে পরলৌকিক হয়ে যায়। আর সে সময় কলমের আঁচড় হয়ে উঠে তার অন্যরকম সৃষ্টি, জন্ম নেয় অনন্য এক কবিতা। কিন্তু সে কবিতা পড়ে থাকে আলোর মুখ দেখার জন্য। কেননা নতুন কবিরা জানে না সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানসম কবিতাকে সে কি ভাবে বাঁচিয়ে রাখবে, লালন পালন করে বড় করবে, সকলের কাছে পরিচিত করবে।    
কবির হৃদয়ে কল্পনা এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও চিন্তার রঙ  মিশিয়ে একজন কবি কবিতা সৃষ্টি করবার অনুপ্রেরণা পায়। আসলে অনেকদিন পূর্বে কোন এক লেখায় পড়েছিলাম-  কবিতা লেখার জন্য নব্য কবি আর পুরাতন কবি যেই হোন না কেন তা কখনই পরিকল্পনা করে হয় না। আসলে কবিতা লিখতে লাগে অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা হতে পারে কেবল মাত্র একটি শব্দ, খন্ড সুর, ভাষা, আংশিক দৃশ্য। হতে পারে সে পাওয়াটুকু ঘুমে, শয়নে, স্বপনে অথবা জাগরণে। অর্থাৎ, সময়-বিশেষে কোন একটি বিশেষ অনুভূতিকে অবলম্বন করে কবির প্রেম-ভালবাসা, আনন্দ-বেদনা বলা, না বলা কথারা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম হয়।
এমন করে প্রতিদিন হাজার হাজার কবিতার জন্ম হয়। অথচ অনেক সময় অযত্ন আর অবেহলায় এই সকল কবিতা সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে না। আর প্রকাশহীন অবস্থায় বেড়ে উঠার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। দিনে দিনে একটি কবিতা তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই কবিতার সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, কবিতাকে বাঁচাতে হবে। কথায় বলে প্রচারেই প্রসার। নতুন কবিদের কবিতাই বেশি মরে যায় অজান্তে, নিভৃতে। আমি তাই “শেষ কবিতা” শিরোনামে  
এক কবিতায় লিখেছিলামঃ


একজন প্রতিষ্ঠিত কবির মৃত্যুতে কত সহস্র
কবিতার মৃত্যু হয়? এ নিয়ে কোন অবান্তর মিশ্র
প্রতিক্রিয়ার কোন অবকাশ নেই। আমি ভাবি আমার মৃত্যুতে
কারও কিছু যায় আসবে না, কারন আমি কবি নই যে কোন ঋতুতে
আমায় নিয়ে হবে কোন ভারী জলসা,
তবুও বুকের মধ্যে স্বপ্ন বাঁধে যে বাসা।


যদি কোন দিন কোন অবসরে আমার কবিতার কোন চরণ,
কোন ঘোর শ্রাবন রাতে, কিংবা কোন নীরব দুপুরে পড়ে স্মরণ,
তাহলে ফেলো না চোখের জল গোপনে।
আমাকে পড়েছে তোমার মনে-
তাতেই আমি সুদূর ওপার থেকেও মিটিমিটি তারার আলোতে,
তোমায় অভিবাদন জানাব বন্ধু আমার, থাকব তোমার ভালোতে।
তোমার সুখে দুঃখে কিংবা অশনি অজানা মন্দে
থাকব তোমার অনেক পাওয়ার ভীষন কোন আনন্দে।


আমার বুকের মধ্যে কবিতার সদ্য একটা কুঁড়ি
দল মেলে হতে চেয়েছিল একটি কবিতা। প্রজাপতি হয়ে উড়ি উড়ি
তোমার গায়ে লুটে পড়তে, ছিল তার কত দিন কত প্রতিক্ষা,
কিছুই চায়নি সে শুধু চেয়েছিল তোমার ভালবাসার ভিক্ষা।
ও টুকুই দিও যদি পার, আর কিছুই নেই আমার নেই কোন বাসনা,
যে চরণখানি তোমার মনে দিয়েছিল দোলা, জাগিয়েছিল আমার কামনা,  
ভেবে নিও সেই আমার শেষ কবিতা, নাইবা হলাম আমি কবি,
থাকলে বেঁচে তোমার মনে, মরনেও পাওয়া হবে যে আমার সবই।


  এই নতুন কবিদের নতুন কবিতার  মৃত্যুর আহাজারি কেউ শুনতে না পেলেও ‘বাংলাকবিতা ডট কম ‘ সে গুমরানো কান্না ঠিকই টের পেয়েছিল বলেই তাকে বাঁচাতে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ এতটা বছর সে হেঁটে চলেছে। আর এই চলার পথে দেশ বিদেশে বিভিণ্ণ জনপদে যেখানেই বাংলা ভাষা আর বাঙ্গালি আছে সেখানেই তার ধাক্কা লেগেছে। বাংলাদেশে থেকে আমিও সেই ধাক্কা খেয়ে বুঁদ হয়ে আছি ‘বাংলাকবিতা ডট কম ‘ এর ইলেক্ট্রনিক পাতায়।
আজ যদি আমার কথাই  আর একটু খুলে বলি তাহলে বলব যে আমি প্রায় ’৭০ এর দশক থেকেই কবিতা লিখছি। কিন্তু কখনই তা পাঠকের কাছে প্রকাশ পায়নি। অথবা বলা যায় কি ভাবে তা প্রকাশ করতে হয় সেটাই জানা ছিল না। পত্রিকায় প্রকাশের পন্থা কি, আমার লেখা আদৌ কবিতা হয়ে উঠেছে কি না, কেউ একে কি চোখে দেখবে।  অথবা কবিতা লিখা বা পড়া ধরেছি সুতরাং ‘গেল গেল’ বলে পাড়ার কবিতা বিমুখ মুরুব্বীরা দুয়ো ধ্বনি দেয় কিনা এমন অনেক শঙ্কা থেকে কবিতা লিখাই প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ‘বাংলাকবিতা ডট কম‘ এর স্বাধীন পাতায় কত স্বাধীন ভাবে যে নিজের লেখা গুলো প্রকাশ করা গেছে তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। এর জন্য আমি কেন আমার মত সকল কবিরাই সিকার করবে সে অনুভূতির কথা কৃতজ্ঞতার সাথে।
আজ ১৮ই ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে আবার এই কবি সম্মেলনের মাধ্যমে আবার নতুন এবং পুরাতন কবিদের মাঝে নিবিড় সেতু বন্ধন তৈরী হতে যাচ্ছে সুদুর বাংলাদেশ থেকে আমিও তাতে সামিল থেকে রোমাঞ্চিত হোচ্ছি। আসলে কলকাতার বোন রুমা চৌধুরির সাথে কবিতার জন্যই নিবিড় সম্পর্ক তৈরী না হলে হয়ত এটা কখনই সম্ভব হত না। কবি সম্মেলন-  ডিসেম্বর ২০১৬ সফল হোক জয় হোক সকল কবি এবং সর্বপরি বাংলা কবিতার। সকলকে  আন্তরিক সালাম এবং  প্রনাম জানাই।