সামনেই ১৬ ডিসেম্বর '১৬ মহান বিজয় দিবস। ১৬ এবং ১৬ কেমন এক 'স্যুইট সিক্সটিন' এর ছোঁয়া। এবারের কবিতা বিজয় দিবসের স্মরণে...
.........................................................


স্বাধীনতা- তোমাকে পাব বলে হাজার বছরের
এক শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জোস্নার গন্ধ ভরা মা’র শাড়ীর
আঁচল ভুলে গৃহহীন গুনছিল মুক্তি যুদ্ধের যাযাবর
প্রহর। গেরস্থ বাবার অনুশাসনের বৈঠক ঘরে নতুন
পতাকার স্বপ্ন বেঁধে সম্মুখে পা বাড়িয়েছিল সেই যুবক
নতুন দেশের এক মানচিত্রে। আর প্রেয়সীর সংযত
ফাল্গুনী প্রেমকে বোনের রাখির বন্ধনে গেঁথে বলেছিল-
নীলাঞ্জনা, আমি যদি যুদ্ধ শেষে ফিরে আসি,  
তাহলেই ফিরে আসবে ভীতিহীন রোদেলা জোস্না  
আমি যদি যুদ্ধ শেষে ফিরে আসি, তাহলে
ফিরে আসবে লাল সবুজের অহংকারী পতাকা।
আমি যদি যুদ্ধ শেষে ফিরে আসি, তাহলে
ফিরে আসবে রাখি বন্ধনে ভালবাসার মেঠো গান
আর ‘জয়বাংলা’ প্রতিধ্বনি হবে সবার -  
যার মুর্ছনায় কেঁপে কেঁপে উঠবে স্বাধীনতার
পতাকা মৌসুমী হাওয়ায় কাল থেকে মহাকাল।


স্বাধীনতা- তোমাকে পাব বলে জন্ম নিল
কাশ ফুলের দোলায় শিমুল ফোটা শহীদমিনার।
শোকের কৃষ্ণকালো রঙয়ের বুকে শুভ্রতার আলো
ছড়াবে বলে ঠাঁই নিল স্বাধীনতার বীজ বঙ্গ মাতার
গর্ভে। ওরা ভেবেছিল-তপ্ত শিশার বিক্ষিপ্ত বুলেটে
কবর দেবে বাঙ্গালির স্বাধীনতা পাওয়ার আজন্ম স্বপ্নকে,  
ওরা ভেবেছিল রক্তের বন্যায় এবার আগুন জ্বালাবে
মমতা আর ভালবাসায় শিক্ত মায়ের মুখের ভাষাতে।
মা, ওগো মা তোমার সন্তানের বুকের রক্তে ধ্বংসের
আগুন নয়, স্বধীনতা যে বীর বেশে হামাগুড়ি দেবে বলিষ্ঠ
যুদ্ধবাজের দামামা পদক্ষেপে- ওরা তা একবারও ভাবেনি,
বুলেটের তপ্ত শিখা যে মানবতার বৃষ্টি হয়ে ঝরবে
নতুন এক মানচিত্রের গায়ে, ওরা তা কল্পনাও করেনি,
জোস্নার গন্ধ ভরা মা’র শাড়ীর আঁচল জীর্ণ হয়ে খসে
পড়ার আগে যে গাঢ় লাল-সবুজের পতাকা হয়ে উড়বে
ওরা তা একটিবারের জন্য অনুমান করেনি।


ইলিশ ফুটানো পদ্মার ঢেউয়ে মুক্তি যোদ্ধার লাশ শত
মাঝির বৈঠায় শক্তি হয়ে পথ দেখিয়েছে স্বধীনতা সুর্যের।  
মাঝির কন্ঠে মুক্তির গান ইথারে ভেসে ছড়িয়ে পড়েছে
দিকে হতে দীগন্তে-“পুর্ব দীগন্তে সুর্য উঠেছে রক্ত লাল,
জোয়ার এসেছে গন সমুদ্রে রক্ত লাল।“ হতে পারে-  
সে আমার ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত, হতে পারে সে আমার
বাবার বুকের রক্ত, হতে পারে সে আমার মায়ের, আমার
বোনের, আমার প্রেয়সীর মমতায় ভাসা নিরাপদ নম্র
কোলের রক্ত।এ রক্ত তো বৃথা যায়নি মা- মাগো,
যখন দেখি- নারীরা নির্ভয়ে হেঁটে যায় কৃতকার্যের
মঞ্চে সাফল্যের মশাল হাতে স্বীকৃত ম্যাডেল কন্ঠে
ঝুলিয়ে নিতে, যখন দেখি যুবকেরা খেলার মাঠে লড়ছে
আর বাইরে দল মত নির্বিশেষে একত্র হয়ে প্রহর গুনছে
গনজনতা আসন্ন বিজয়ের। এ রক্ত একেবারেই বৃথা
যায়নি, যখন দেখি বাবার শাসনে আজও ঘরে ফিরে
আসে পথ ভোলা অবাধ্য ছেলে অস্ত্র ফেলে কলম ধরতে
অথবা ফুলের ডাটা হাতে লালনের গানে ব্যকুল হতে।  


আমরা তাই শ্রেষ্ঠ একজন বাঙ্গালি থেকে হয়ে যাই  
কোটি কোটি শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, আমাদের চারিপাশ ঘিরে
থাকে রেস কোর্স ময়দান, আমাদের চোখের সীমানায়
ভীড় করে থাকে উল্লসিত লাখো জনতার স্রোত,
আমাদের কানে আজও শুনি সেই ঐতিহাসিক কবিতার  
জীবন্ত চরণ-“ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। মাগো, ও মা,
তোমার ছেলের বদৌলতে আমরা স্বধীনতা পেলাম অথচ  
মুক্তি পেলাম না বলে কেন আজও প্রতিক্ষায় থাকি।
কেন আজও বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াই রেস কোর্স ময়দান,
কেন আজও শুনতে পাই গুলির শব্দ, অত্যাচারী চিতকার,  
কেন আজও দেখি বাবার অকাল মৃতদেহ, কেন আজও
ধর্ষিত আমার নিষ্পাপ বোন, আমার প্রেয়শী?আমরা কি
আজও গুনছি মুক্তি যুদ্ধের যাযাবর প্রহর!
    __