তখনও মেহেদীর পাতায় রঙ ধরেছিল কিনা, ঘুনাক্ষরেও জানি না।
তবে কচি পাতারা মাথা দুলিয়ে যে ভাবে শিন্‌শিনে হাওয়ায় নাচছিল
মাঘের প্রথম প্রহরে- তাতে ন্যাকামোর জন্য নয় সত্যি সত্যিই আজ
পোড়া মন নিবিড়ভাবে খুঁজছিল মেহেদী রাঙ্গা তোমার হাত আর পা
যুগোল। খুঁজছিল খোলা ছাদে বসে তোমার এলো চুল আর তাঁতি আঁচলের
গন্ধে হারাতে।


বিদ্যুতের আলোয় বদ্ধ বারোয়াড়ি ঢাউস হল ঘরের আংগিনায়
ব্যস্ত কর্মজিবী নারীদের বিভিন্ন কাজের চঞ্চলতা থাকলেও আমি প্রায়  
আনমনেই আজ নীচু ভলিউমে শুনছিলাম তোমার প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত।
আর ফাঁকে ফাঁকে ভাবছিলাম মেহেদি রঙ করা তোমার অঙ্গ বিশেষ।
কখনও ভাবছিলাম-তুমি সেই প্রথম থেকেই রবীন্দ্র সংগীতকে কেন এত
ভালবাস। কেন ভালবাস “তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগনের তারা”।


আজকাল ছাদে যেতে তেমন আর ভাল লাগে না। আসলে ছাদে যেতে হলে
সাথে গল্প করার সঙ্গী লাগে, খোলা আকাশ লাগে, চুল দোলানো খোলা
আঁচল হাওয়া লাগে। ভাংগা ভাংগা মেঘের বিকেল লাগে, পাখি নীড়ে ফেরা
সন্ধ্যা লাগে। অথচ আজকের বিকেলটা ছিল কেমন ঝির্‌ ঝির্‌ করা ধূসর
বৃষ্টির ঝাপটায় ম্যাড়্‌ ম্যাড়্‌ করা মাঘী কষ্টে ভেজানো উননের মত।


তবুও তোমাকে যদি কাছে পেতাম তাহলে তোমার শরীরের ব্যাথাকে উপেক্ষা
করতে বলতাম, শীতে পা ফেটে চৌচির হয়েছে বলে যে গ্রাম্য কষ্ট বয়ে নিয়ে
বেড়াও মনের ভেতর, মেহেদী লজ্জারাও তাতে ভিজে ভিজে যায় শিশির ঝরা কষ্টে।
তাকে আলিংগনের ভাষা আমার জানা নেই, কষ্টটা তোমার বললেই কি আর সব
শেষ হয়ে যায়? কখনও শেষ হয় না। আর সে আফ্‌সোসেই আজ ভেতরে ভেতরে
খুন হয়ে যাচ্ছি মেহেদীর রঙে তোমাকে এমন মাঘী সন্ধ্যায় কাছে না পাওয়ার কষ্টে!