একদিন কি জানি কি ভেবে মেয়ে আমার বলল- আচ্ছা বাবা,
তোমারও তো বাবা ছিল তাই না? তোমার সেই বাবার কোন
কথাটা আজও বেশী মনে পড়ে অথবা যদি জিজ্ঞেস করি-
তাহলে কি বলবে? বাবাকে মনে পড়লেই কোন স্মৃতিটা বেশী
মনে পড়ে তোমার?


এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হোয়ে আমি ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হোই,
কখনও শান্ত হোই, কখনও চোখের কোনে এসে জমে জল। কখনও
ঠোঁটে ইচ্ছে করেই ঝুলিয়ে রাখি মৃদু হাসি। না- দীর্ঘ সময় ধরে
তা নয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এমন কতগুলো শারীরীক ভাষা
দোল খেয়ে যায় আমার পুরো অস্তিত্বে।


এবার বাবার কথাটা কেমন যেন নতুন করে মনে পড়তে থাকে।
অন্য সময়ের থেকে তা বেশ আলাদা। বড় হওয়ার পর থেকে
সারা জীবন ছুটে গিয়েছি বাবার কাছে। কিন্তু একদিন বাবাই আমার
কাছে এলেন যখন- তখন মনে হল আমি বড় হয়েছি। আমার কাছে বাবার
সেই প্রথম আসা এবং শেষ।


রক্তের টান, শরীরীয় গন্ধের মোহ, রেখে যাওয়া অস্তিত্বের চিহ্ন।
এমন অনেক কিছুই হোতে পারে অথবা হয়ত কোনটাই নয়।
আমার বসবাসের রাস্তায় ফিরছিলেন তাই ফেরার পথে একটু
ঔরসের সন্ধান কোন আগাম সংকেতে। নইলে সেই-ই হবে কেন
বাবার সাথে আমার শেষ দেখা।


মেয়েকে বললাম-মা’রে, মনে পড়ে; মনে পড়ে, আমার বাবাকেও
ভীষণ মনে পড়ে। আর যখন মনে পড়ে তখন একটি প্রশ্নই সারা
ইন্দ্রীয় জুড়ে ভর করে- বাবাকে কেন স্বশরীরে নিতে পারলাম না
একটিবারের জন্য কোন আধুনিক হাসপাতালে। তাতে কি হোত,
বাবা কি আমার বেঁচে যেতেন?


কেউ তো আর চির দিন বাঁচে না। সকলেই মরে যায়, সকলকে
মরতে হয়। তবুও মৃত্যু পূর্ব মানুষ চায় তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে
বুকের মাঝে আগলিয়ে রাখতে, কোলের ‘পরে মাথা রেখে আদর
করতে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখ ভরে কাঁদতে। তার কোন কিছুই করতে
না পারায় বড্ড খারাপ লাগে বাবার কথা মনে পড়লে।


মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে তাকে ঝট্‌ করে কাছে টেনে নিই, বুকের
মাঝে অস্তিত্বের ওম্‌ উসকে উঠে, ওর চোখে চোখে চোখ রেখে বলি-
মা’রে আমার বাবার মত তুইও কি তোর বাবার অবর্তমানে তার
স্মৃতি নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে কোন একাকিত্বের প্রার্থনায় থাকবি বিভোর,
নাকি- ভুলে যাবি জন্ম? পলকহীন মেয়ের দৃষ্টি তখন মস্ত প্রসারিত!