সিগারেটের তামাকু স্বাদ প্রতিনিয়ত জানতে আর
নিকোটিনের দৃষ্টিহীন নীরব ফোকলা  দংশন অজান্তে
কুরে কুরে খাচ্ছিল আমার বেঁচে থাকা শেষ নিঃস্বাস আর
নিঃস্বার্থ ভালবাসাকে। কখনও মনে হয়নি আমি ধ্বংস হচ্ছি
তিলে তিলে। বরং প্রয়োজনে বউ ছেড়ে দিতে পারব কিন্তু
সিগারেট ছাড়া যাবে না এমন মুর্খ অহমিকা ছিল।
এ যেন বউ খুব সস্তা জিনিষ!


শুরুটা পাটকাঠিকে সিগারেট বানিয়ে। কেন্দুপাতার বিড়ি
আর সিগারেটের মধ্যে পার্থক্যটা সে ছোট কালেই কেমন
করে জানা হোয়ে গিয়েছিল। হতে পারে পাটকাঠির রঙ
সাদা তাই। কেন্দু পাতার বিড়ির খাকি রঙয়ের সাথে মানায়
না তার আভিজাত্য। এমন করে আভিজাত্যের বিষয়
সিগারেটে আসলেও শিক্ষায় হল উপেক্ষা।  


মুরুব্বিদের বারনটা ছিল তাই তামাকহীন পাটকাঠির
সিগারেটের স্বাদ নেয়াতেও । অজান্তের  দংশন টের না
পেলেও সিগারেট যে খারাপ জিনিষ তা শৈশবের অনুভূতিতে
পাপ করার মতই বাসা বেঁধেছিল। অথচ অলক্ষ্যে কেমন করে
যে সে আমার ওষ্ঠ চুম্বনের সংগী হোয়ে রইল এতটা  বছর
তা বুঝতেই পারিনি।


বুঝতে পারিনি ঠিক তাও নয়- বরং একটা প্রচ্ছন্ন
আস্কারাতে সে সব সময় বারনের মধ্যেও বেশ শক্ত
জায়গা করে ছিল। তাইত বেহুদা প্রতিজ্ঞা ভেবেই সে
আরও লজ্জ্বাহীনভাবে অপেক্ষায় থাকত কখন নগ্ন চুম্বনের
স্বাদ নেবে অবলীলায় গন্ধ করে চারিপাশ। কেননা সিগারেট
জানত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার জন্যই তার বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞা হয়
বিভিন্ন দিন ক্ষনের উছিলায়।


এ যুদ্ধ অনেক বড় যুদ্ধ, এ যেন লালসার সাথে
ললিতের যুদ্ধ। মানসিকতার সাথে মনের যুদ্ধ, নিকোটিনের
সাথে নিরাময়ের যুদ্ধ, সময়ের সাথে শোধরানোর যুদ্ধ।
যুদ্ধ ভুলে থাকার, যুদ্ধ মনে রাখার, যুদ্ধ নিজের সাথে,
নফসের সাথে, মননের সাথে এবং রক্তের অনেক গভীরে
মৃত্যুর হাজার জিহ্বার নীরব দংশনের স্বাদের বিরুদ্ধে।


তাই সিগারেট ছেড়ে দেয়ার বিষয় না, সিগারেটকে
ঘৃণা করার বিষয় না, সিগারেটের স্টিক দিনে কম করে
ফেলাও সিগারেটকে উপেক্ষা করার সূচনা নয়। বরং আমি
আমার নিকোটিনে নোংড়া মনকে ছেড়েছি কিনা, আমি
আমার লালসাকে ঘৃণা করতে ছিখেছি কিনা, আমি
আমার রক্তের সাথে মৃত্যু নয় জীবনের স্বাদকে উপভোগ
করছি কিনা সেটাই বড় কথা।


জানি না এমন ভাবনা, অনুভূতি, স্বাদ, সংকল্প, ঘৃণা,
এখন এসে বাসা বেধেছে কিনা মনের মধ্যে, যার অদৃশ্য
প্রভাব এখন বেশ দৃশ্যমান প্রতিদিন। কেননা আমি সিগারেট
ছেড়ে দিইনি বরং  নিকোটিনে নোংড়া মনকে ছেড়ে দিয়েছি
বেশ কিছুদিন হল,  সিগারেটকে ঘৃণা নয় বরং আমি আমার
লালসাকে এখন ঘৃণা করতে শিখেছি, আমি আমার রক্তের
সাথে মৃত্যু নয় জীবনের স্বাদকে উপভোগ করছি প্রতি মুহুর্তে।