অনেক বছর পর আবার এলাম ফিরে…
জানতে ইচ্ছা করছে না আমি কে?
কি আমার পরিচয় ?
না! জানি না আমি কে ?
কি আমার ধর্ম ।
জানিনা আমার জন্মদাতা পিতা কে?
আমার মা’ও জানতেন না।
আমার মা – রুবীনাবাই
জন্মেছিলেন এখানেই এক আস্তাকুঁড়ে,
কোন পুরুষের ঔরসজাত সে কথা
সঠিকভাবে বলতে পারেননি আমার দাদিও।
সে ক্ষেত্রে জাত-পাতা … চুলোয় যাক !
আমার মা শুধু তার মা’কেই জানতেন।
তাই সংসার বা পরিবার শব্দের অর্থ
আমার কাছে এখনোও পরিষ্কার না।
যাক ওসব কথা, তার চেয়ে শুনুন
বালক বয়সে ফাঁকি দিয়ে ট্রেনে ওঠার আগে
আমি কি কি দেখেছিলাম এখানে।  
আজ ভাল মনে নেই আমার
তবু সেই এঁদো গলি, ঘুপচি ঘর
অশিক্ষার অন্ধকারে মাতালের আড্ডা
জুয়াড়ী-চোর-ডাকাত, দাগী খুনী
আর রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া
স্বপ্নগুলো হঠাৎ ভেঙে যেত আচমকা শব্দে,
দরজা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়তো
চরিত্রহীন লম্পট দারগার দল।
দাদি আমাকে নিয়ে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে
সারা রাত চোখের জলে কাটিয়ে দিত
কত অভিশপ্ত রাত, কত নক্ষত্রের রাত!
আমি ভাঙা ল্যাম্প পোষ্টে ঠেস দিয়ে
কাটিয়ে দিতাম অসংখ্য নক্ষত্রের ভীড়ে,
অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করতে পারতাম
আমার মা' আবার কতদিন পর করবে বমি!
ক্ষমা করবেন আমাকে মা’য়ের চরিত্রের কথা
বলতে বলতে চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠার জন্য।
কিন্তু কুড়ি বছর পর মা’কে খুঁজতে এসে
আমার জন্মভূমিকে দেখতে এসে কি পেলাম!
ওরা বলছে পৌরাণিক রাজার জন্মস্থান
অন্যেরা বলছে বাদশা এখানকার পিতা,
আমি জানি না পৌরাণিক চরিত্রের প্রমাণ
আমি নিশ্চিত নই বাদশার পদছাপের দাগ,
আমি শুধু আমার মা’কে জানি,
যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন
তিনিও যে এখানেই জন্মেছিলেন
এখানেই …এখানেই মরে গেছে হয়তো!
আমার পরিণামের কোন ভয় নেই
ভয় নেই চিরন্তন এন্তেকালের,
অমৃত বা বিষের নেই প্রয়োজন,
শুধু এই ঝুপড়ির জন্য, জন্মভূমির জন্য
আমার রোজা আমার উপবাস
আমার প্রার্থনা আমার নামাজ,
আমার মাতৃভূমিতে আমাকে থাকতে দিন
থাকতে দিন সহদরের আত্মীয়তায়
চাই না কোন শান্তির ধর্ম রাষ্ট্র
চাই শুধু মা’য়ের ভালবাসা,
তা যদি না হয় আমি মরিয়া হয়ে উঠবোই!