(কথা ও কাহিনী অবলম্বনে তৃতীয় নিবেদন)
(কবিতাটি আসরের শ্রদ্ধেয়া কবি মিমি দিদিভাইকে উৎসর্গ করলাম)


'শ্রী' আমার অগ্নিস্বাক্ষী করা বউ
কনে দেখা আলোয় চেনার আগেই
অষ্টমঙ্গলা থেকে ফেরার পথে
রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় পা'দুটি হারালাম,
ঈশ্বরের অসীম কৃপায় 'শ্রী' রক্ষা পেল
কারখানার কাজ গেল বন্ধ হয়ে।
সংসারে আমরা দু'জন ছাড়া ছিলেন বাবা
তিনিও যেন বোবা হয়ে স্থির -
নিঃশব্দ ভঙ্গিতে সবকিছুই দেখতেন
কোনকিছু বলার শক্তি তার ছিল না।
পাড়ার লোকে বললঃ অলক্ষুনে বউ
আসতে না আসতেই ভাঙ্গন সংসারে!'
ভালবাসার স্বাদ আমাদের বোঝা হল না
পঙ্গু স্বামী আর নিঃশ্চল শ্বশুর সেবা
শ্রী'র জীবনের একমাত্র কাজ হল,
জমানো টাকায় এভাবে আর চলছিল না
তিন-তিন মাস অতিক্রান্ত হল ধীরে
এরই মাঝে হঠাৎ একদিন রজত এলো
ও ছিল আমার ছোটবেলার বন্ধু,
বিয়েতে আসতে না পারায় দেখা দিতে
কিন্তু এভাবে দেখে ওর বড় কষ্ট হল;
তারপর থেকে প্রায়ই আসতো এখানে
শ্রী'র কাজের ব্যবস্থাও হল রজতের দয়ায়
সকাল আটটায় সবকাজ সেরে বার হওয়া
ফেরা রাত দশটার পর রোজকার রুটিন হল,
আর তারপর আবার স্বামী ও শ্বশুর সেবা
একঘেয়েমী জীবনে শ্রী হাঁফিয়ে উঠছিল
তবু মাঝে মাঝে দেখতাম রজত এলে খুশি হত
ওরা গল্প করত, খাওয়া-দাওয়া হাসাহাসি-ঠাট্টা
প্রথম প্রথম আমার খুব অসুবিধা হত
ক্রমে ক্রমে সব মেনে নিয়েছি।


কিন্তু কি যে হয়ে গেল সেদিন
কি যে ক'রে ফেললাম আমি -
তখন রাত বারটার ঘন্টা পড়ছে ঘড়িতে
বই পড়ার শেষে ঘুমের ওষুধ খেতে যাব
এমন সময় উপরের ঘরে প্রচন্ড গোঙানির শব্দ
আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না,
ক্রাচে ভর দিয়ে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে
যখন উপরের ঘরে পৌঁছলাম
তখন আমার চোখ পুড়ে যাচ্ছে!
টেবিলে ছিল মদের গ্লাস আর
কাটা ফলের প্লেটে রাখা ছুরি
অকস্মাৎ আমার হাত ছুরির আলিঙ্গনে
রজতের বুক থেকে নিয়ে এলো তাজা রক্ত!
তারপর তুমি সবকিছুই জানো -
বারো বছরের সাজা হল আমার,
আমি খুব বোকা বলে
তুমি আমাকে একদিনও ভালবাসনি
একদিনও একটু সোহাগ করনি
হয়তোবা আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি,
আজ এক বছর হল জেলের মধ্যে
আমার সাথে কেউই দেখা করতে আসে না
একদিন, অন্তত একদিন এসো না আমাকে দেখতে
একটূ মোচার তরকারী নিয়ে এসো
কতদিন ভাল কোন খাবার খায়নি,
আমি খুব বোকা বলে
তোমাকে কখনোই সুখ দিতে পারিনি
আমাকে ক্ষমা কর তুমি
ভাল থেকো, বুড়ো বাপটাকে দেখো
কি যে হয়ে গেল সেদিন !
আমি ভাল নেই শ্রী'
ইতি, তোমারি বরেণ।