বৃষ্টি থেমে গিয়ে সন্ধ্যা অতিক্রমে রাত হয়েছে গভীর
খোকা আর খোকার মা জেগে আছে ছেঁড়া মাদুরে,
টপ টপ করে ফোঁটা  ফোঁটা জল এখনো পড়ছে ঘরের মধ্যে
চারিটি চোখে আধো ঘুম, জেগে আছে আতঙ্কের রাত
বাইরে এখন ঝড়ো বাতাসের শব্দ ক্ষীণ হয়ে এসেছে
ঢক ঢক শব্দে এক গ্লাস জল উদরস্থ হল লন্ঠনের আলোয়,
অমনি চিত্কার দিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো দুধের শিশুটির --
কিন্তু দুধ কোথায় ! তাকেও খেতে হল শুধুই জল।
একটু পরে খুট করে একটা শব্দ হল দরজার দিকে,
--আমিগো রমজানের আব্বা, দরজাটা খুলে দাও বিবি। '
রেহেনা বিবি তার বুকের ওম থেকে ঠোঁট দু'টি সরিয়ে
দরজা খুলে দিতে শীতল বাতাসের সাথে রসিদ এল ঘরে,
চালের ছিদ্র বেয়ে চাঁদের কিরণ এসে পড়েছে শিশুটির শরীরে
শিশুটি বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইল রসিদের দিকে,
তখনও তার ঠোঁট দু'টি শুকনো, মা'র বুকে দুধ নেই --
ওর বাবা তাকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে আদর করলে
কিন্তু খিদের জালায় শিশুটি আবার ছটফট করে উঠল,
আবারোও শুধুই জল আর জল, এমনই পাষাণ কেন আল্লাহ --
কোনদিন একবেলা খুঁদের ঘন্ট জোটে আর কোনদিন উপবাস !
তেমন দিন কবে আসবে যেদিন পেট ভরে দুধ পাবে --
পেট ভরে ভাত পাবে এই হতভাগ্য মানুষগুলো !
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুঁজো শরীর শুধু হাত পাতে
এই পোড়া দেশে ভিক্ষা দেবে কে, আমরা সবাইতো ভিখারি!
তাই দিনের শেষে ফুটো কলাইয়ের পাত্র পূর্ণ হয় না,
এখানে মানুষের ভীড় আছে, চলেছে সারি সারি মৃতদেহের মিছিল!