আমি একটি ছোট্টো চারাগাছ
অনেক দাম দিয়ে কিনেছিলে
আরো বেশী মূল্য পাবার আশায় !
পুত্রসম লালন-পালন করেছ
প্রতিদিন প্রতিক্ষণ যত্ন পেয়েছি
আমার একটু একটু বেড়ে ওঠা
সে শুধু আমার নিজস্বতা নয়,
প্রথমটায় আমায় খাদ্য দিয়েছ
আমার দূর্বলতায় সেবা করেছ
আমার অসুস্থতায় কাতর হয়েছ
অস্তিত্ত্ব্ব রক্ষায় মমতার পরশ,
দূর্বিপাকে একাত্ব হয়েছ তুমি।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে
তুমি এখন ভারাক্রান্ত ক্ষীণ,
আমি হয়েছি স্বনির্ভর প্রাণ --
আমার শেকড় আষ্ঠেপিষ্ঠে বেঁধেছে
তোমার সাজানো বাগানের মাটি,
হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি --
আমার যন্ত্রনায় স্নেহের স্পর্শ
আমার ক্লান্তিতে দিশেহারা প্রাণ,
দগ্ধতায় বিমূঢ় আস্ফালন
রুগ্নতায় অস্থির চিত্ত তোমার
সজীবতায় উন্মুখ পিতৃ হিয়া !


তুমি যখন ছয় বত্সরের
আমি তখন মাত্র ছয় দিনের
ধীরে ধীরে আমাদের বেড়ে ওঠা,
মা'মরা বাপের আদরের মনি  
বহু কষ্টে বহু সংগ্রামের
মধ্যে তোমার-আমার পরিচয়।
তোমার বাপটা গেল মরে
কলেজে আর যাওয়া হলনা,
শুরু হল বাঁচার সংগ্রাম
সেদিন আমিই ছিলাম প্রেরণা
নিজেকে আর আমাকে নিয়ে
খুব ব্যস্ত জীবনের দিনগুলি
এগিয়ে চলল কায়িক পরিশ্রমে
জীবনের অনেক সাধের সমাপ্তি
তবুও আমাদের প্রেম ছিল
চির সবুজের দেশে বসন্ত।
যখন পরিশ্রমে ক্লান্ত দেহ
আমারি ছায়ায় নিবিড় হয়েছে
যখন কষ্ট পেয়েছ অবিরাম
আমাকে জড়িয়ে অশ্রুপাত করেছ
কখনো নিজেকে একা মনে হয়নি !


চলে গেছে আশিটা বছর --
জ্বরা আর ব্যাধি গ্রাস
করেছে তোমার কুঁজো শরীর
তুমি এখন বড়ই একা
নিজেকে অপরাধী মনে হয় !
আজ আমিও বড়ই অবষন্ন,
আমার গুঁড়ির উপর প্রকান্ড
একটা উইয়ের বাসা বেঁধেছে,
আমি যন্ত্রনায় ছটফট করি
তুমি কেবল নি:স্পলক চোখে
চেয়ে থাক আর অশ্রু পাতে
দিন চলে যায় ইতিহাসে।


এল সেই শীতের ঝোড়ো রাত
কনকনে ঠান্ডায় আর ঝড়ের দাপটে
দু'টি প্রাণের প্রদীপ যায় নিভে,
সকাল হতেই দেখা মেলে --
ঘরের মধ্যে নি:স্প্রাণ দেহ,
বাহিরে উপড়ে পড়া চন্দন গাছটি
ঘরের বারান্দা অবধি নিথর,
পরিশেষে সুগন্ধিত চন্দন গাছ
নিজের জীবন দিয়ে আলিঙ্গনে বদ্ধ
আগুনে দগ্ধ দু'টি প্রাণের মিলন।
আজ আমি নেই, নেই তুমিও
আছে হাজার হাজার চারাগাছ
তাদের জীবনই আমার জীবন
জীবনই মূল্যচোকাবার মূল্যায়ন !