গরীব সৎ কাঠুরিয়া আর জল দেবীর গল্প আমরা সকলেই জানি
গল্পের শেষ পরিনতি কাঠুরিয়া সততার জন্য
নিজের লৌহ কুঠারের সাথে সোনা-রুপার কুঠারও লাভ করে ,
এখানেই গল্পের শেষ হলেও জীবন থেমে থাকেনি –
অনেক সময় পার হয়েছে, জীবনের রীতি-নীতি, আয়-ব্যয়
এক কথায় আমরা আধুনিক হয়েছি,
এখানেই গল্প আবার নতুন প্রাণ পায় ।


একদিন সকালে ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি রূপ নেয় হাতাহাতিতে,
রাগের বশে সজোরে থাপ্পড় মারে কাঠুরিয়া তার বৌ’টাকে
আর এতেই যত বিপত্তী বাঁধে।
এমন কিছু বেশি সে চায়নি --
এই গরমে একটু ঠান্ডা জল আর
ঘরে বসে রঙীন ছবি দেখতে চেয়েছিল
সেটাই ছিল কাঠুরিয়া বৌ’য়ের বড়ো দোষ,
কেননা সেই জল দেবীর কাছে পাওয়া
সোনার কুঠার বেচে সে বৌ’য়ের আবদার মেটাতে পারবেনা,
শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর গায়ে হাত তুলল কাঠুরিয়া।
এখন সে কাঠ কাটতে যায় না
বাজারে বড়ো সবজির দোকান দেয় ;
সেদিন বেলা ১২ টায় বাড়ী ফিরে শোনে --
" – তোর্ হলো কি ! মেয়ে মানুষের গায়ে হাত
  গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে তোকে মুক্তি দিয়েছে
  এবার নিশ্চিন্তে থাক একা। "
একা থাকার যন্ত্রণা বড়ো কঠিন
তাই কাঠুরিয়া কাঁদতে কাঁদতে
গঙ্গার দিকেই উন্মাদের মত ছুটে যায়
পাড়ে বসে দুপুর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত  ....
ঠিক ধরেছেন, এবারেও জলদেবীর  দয়া হল
– কিরে আবার কুঠার হারালি নাকি !
– না মা, কুঠার নয়
  এখন কাঠ আর তেমন কাজে লাগে না
  সবাই গ্যাসে রান্না করে; আমি সবজি বেচে খাই।
– তবে কি হারালে ?
– বড়ো ভুল হয়েছে মা, রাগের বশে বউ-এর গায়ে হাত
  সে বড়ো লোভী, তুমি অন্তর্যামী !
  দয়া করে তাকে ফিরিয়ে দাও !
– এযে মস্তো বড়ো ভুল এর ক্ষমা নেই।
– তুমি সব পার দেবী আমাকে দয়া কর।
– এই শেষবার আর কখনো আমার দেখা পাবেনা
  আমার শক্তি প্রায় নি:শেষ।
কিছু সময় পরে জলদেবী এলেন কুমারী সুচিত্রা সেনকে সঙ্গে নিয়ে
কাঠুরিয়া দেখে অবাক হয়ে ভাবে --
কি সুন্দর দেখতে, গৌরবর্ণ, স্নিগ্ধ দৃষ্টিপাত
ঠোঁটের কোনে মায়াবী হাসি, এতো সোনার হরিণ !
– হ্যাঁ মা, এই আমার স্ত্রী কাঠুরিয়া বলে।
দেবীর চক্ষু রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে
– ছি ছি ! তোদের সমাজ বদলেছে জানি,
  কিন্তু সততার জায়গা নেই, শুধু ঠগবাজ !
হাত জড়ো করে কাঠুরিয়া বলে –
– মনে পড়ে পুরানো দিনের কথা
প্রথমে সোনার কুঠার, পরে রুপার
শেষে আমারি স্বীকারোক্তি লৌহ কুঠার
সততার মূলধন হয়ে ফিরে আসে তিনটিই;
সেদিন ছিল আশীর্বাদ আজ অন্যরকম -
এখন তুমি এনেছো সুচিত্রা, আসবে মধুবালা
সব শেষে আমার কালো-মোটা বউ।
গল্পের পূনরাবৃত্তি ঘটতে দেব না
নেব না তোমার দেওয়া তিনটে বউ
একটিতেই আমি নাজেহাল –
তাই প্রথমেই দিয়েছি সততার পরিচয়  
একি অপরাধ !
– দেবী প্রসন্ন হয়ে বলে --
জয় হোক সততার
জয় হোক  তোমাদের !'
কাঠুরিয়া ফিরে পেল তার ভালোবাসা।