**** (কথা-কাহিনী) ****


বেনামী এক চিঠি এল আমারই হাতে
ঠিকানা যাছিল সেটা আমারই
21/B, হরিহর স্ট্রিট,লক্ষ্মী-নারায়ণ কলোনী, কলকাতা-71
তবুও কেন যে কোন নাম নেই !
আশ্চর্য্য খামের মধ্যে আমারই এক অস্পষ্ট ছবি
বয়স তখন সবেমাত্র পাঁচ-ই হবে,
পরণে হাফ্ প্যাণ্ট হাফ্ হাতা জামা
মাথার চুলগুলি কোঁকড়ানো আর এলোমেলো
সরস্বতির পায়ের কাছে বসে,
সেইদিনই আমার প্রথম হাতেখড়ি হয়েছিল।
আর ওইদিনই অনেক আনন্দের মাঝেও
আমাদের সংসারে এসেছিল বিচ্ছেদের ঝড়,
বাবা আমাকে আর মা'কে ছেড়ে
অন্য সংসারে অন্য সুখের আশায়।
সেদিন অতকিছু বুঝিনি আমি
আজ বুঝি কেন এই বিচ্ছেদ !
আমি ছিলাম ওঁদের অবাঞ্ছিত সন্তান
কেন না আমি মা'য়ের গর্ভজাত নই,
আমার মা ছিলেন বন্ধ্যা এক নারী।


পঁচিশটা বছর কেটে গেছে ক্রমে
কখনও বুঝিনি মা'য়ের স্নেহের অভাব,
আজ আমার সেই অশুভ জন্মদিন -
আমাকে মনে করিয়ে দেয় মুঠোফোনের বার্তা
যদিও জানিনা আমার সঠিক্ জন্ম কবে
অথবা কোন্ কোন্ নারী-পুরুষের ঔরসে
জানিনা আমার কি জাত, কি ধর্ম-বর্ণ
তবুও মনে পড়ে মা'য়ের অম্লান মুখখানি।
মা'ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন
দুই বৎসর আগে বার্ধক্যের ভারে,
মনে পড়তেই চোখে এল জল ভরে
এক ফোঁটা জল পড়ে ছবিটির উপর,
মা' আমাকে ডাকতেন 'স্বদেশ' নামে
আর বাবা ডাকতেন অবাঞ্ছিত বলে,
ছবির উপর পড়ে থাকা নোনা জল
মুছতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখি -
ছবিটির অপর পিঠে লেখা কয়েকটি কথাঃ
''দুঃস্বপ্নের স্বদেশ, আজ তোমার ত্রিশতম নবজন্ম
তুমি ভালো থেকো বাবা, আমাকে ক্ষমা কর''
ইতি তোমারি হতভাগ্য অবাঞ্ছিত পিতা।
(এইখানে জনান্তিকে ব'লে রাখাই শ্রেয়
সৃষ্টিকর্তা আমাকে একেবারে নিরাশ করেননি
আমার সুমেরু ভাগ্যলিপি লিখনের টীকায়।)
আজ আমি তোমাদেরই দুঃস্বপ্নের স্বদেশ
অস্তিত্ব রক্ষায় গাই সাম্যের গান ...!!