সময়টা সাতের দশকের মাঝামাঝি হবে
কোন এক দিনের অবাধ্যতার ছায়াছবি,
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে
রাস্তায় আলো জ্বলেছে অনেক আগে
কারখানায় ছুটির সাইরেন বাজছে
শ্রমিকদের ঘরে ফেরার তাড়া
অদূরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে কাঁসর-ঘন্টা
পাশের বাড়ি থেকে তানপুরার তান ভেসে আসছে
টিভিতে সংবাদ পড়ছে পাঠিকা
রান্নাঘর থেকে আলু ভাজার গন্ধ
সবমিলিয়ে অবসরের সন্ধ্যা বড় একগুঁয়ে,
একটু পরেই লিকার চা সাথে মুড়িমাখা
সেই একঘেঁয়ে খবর শুনতে শুনতে অনিহা
স্বার্থনীতি - রাজনীতি - দুর্নীতি
চুরি - ছিনতাই আর গণধর্ষণ,
ঘড়িতে রাত আটটা বেজে ত্রিশ
মেয়ে এখনও বাড়ি এল না -
তবে কি ও বেশি বেশি টিউশনি করছে
কি আর করা, প্রাক্তন প্রাইমারি টিচারের কন্যা যে!
ওর মা'য়ের চোখে ছানি পড়েছে অনেক দিন হল
কাটাবো কাটবো করে আজও হয়ে ওঠেনি
ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে ঘড়িতে ন'টা বাজলো
তবুও চৌত্রিশ বছরের যুবতি মেয়ে ঘরে ফেরে না
এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দয়ায় আবার অন্ধকারে
আর স্থির থাকা চলে না এই ভেবে
স্যাঁতস্যাঁতে বারান্দা থেকে পা'য়ে চটি গলিয়ে
হাতে তিন ব্যাটারীর টর্চ নিয়ে বাইরে এগিয়ে গেলেন
মেয়ের মা রান্না শেষ করে এখন চুল বাঁধছে
অনেকটা সময় পার হল, ঢং ঢং করে দশটা বাজলো
হঠাৎ ঠক্ ঠক্ শব্দ শুনে এগিয়ে গেলেন মা'
দরজা খুলে তিনি যা দেখলেন, তা তিনি দেখতে চান নি
তিনি কিছু বলার আগেই, মেয়ে বলল -
আমাকে কোন প্রশ্ন করো না, একা থাকতে দাও।'
সেই যে দরজা বন্ধ হল আর খুলল না
মেয়ের বাবাও ফিরে এলেন না ঘরে
রাতের খাবার বাসি হল, এল ভোর
ভোরের আলোয় মিলল দু'টি নিথর জীবন
একটি মেয়ের অপরটি মেয়ের বাবার,
লজ্জায় ঘৃণায় আত্মগ্লানিতে সুইসাইড করেছে মেয়ে
আর মেয়েটির বাবা অনুশোচনার অঙ্গারে
রেলের লাইনে দিয়েছেন তার মাথা,
মেয়েকে খুঁজে বিফল হয়ে বাড়ি ফেরার পথে
যখন রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন
তখনই দু'টি নরম হাত অন্ধকারে দেয় টান  
কুৎসিত প্রস্তাব টর্চের আলোকে জানিয়েছিল বিদ্রুপ,
মেয়েটির ঘরে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল -
মা'গো আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও
নিজের পেট ভরতে আর তোমাদের সুখে রাখতে
শরীর বেচতে বেচতে আমি আজ বারাঙ্গনা
অন্ধকারে নিজের বাবাকেই আজ জঘন্য প্রস্তাব জানাই,
এই লজ্জা নিয়ে কোন মুখে তোমাদের সামনে দাঁড়াব
তাই মৃত্যুকেই বরণ করে নিলাম - ইতি তোমাদের হতভাগিনী!'
বোবা কান্নায় মেয়ের মা'ও আজ এক জীবন্ত লাশ।