(কবিতাটি কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন)


"তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি
রজনীর শুভ্র অবসানে। কিছু আর নাই বাকি,
নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্যরাশি,
নাই অভিমান, নাই দীন কান্না, নাই গর্ব-হাসি,
নাই পিছু ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালাখানি
ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।"......(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)


সেদিনটাও ছিল এমনই এক  ২৫শে বৈশাখ
'শেষের কবিতা' উপন্যাসের পাতা ওল্দ্টাতে ওল্দ্টাতে
হঠাৎ থেমেছিলাম কিছুটা সময়,
নীবিড় হয়ে ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে - রবীন্দ্রনাথ।
প্রেমের আকুতি আর প্রেমের আহুতির সহাবস্থান
চিরত্বরে জ্বাজ্বল্যমান ক'রে গেলেন সপ্তপদী গমনে নয়
ত্যাগব্রতের যাবৎজীবন উদাহরণ হয়ে উদ্ভাসিত,
তবুও বিদায় বেলায় মন হল ভারাক্রান্ত
মুখ আজ মুকহীন বধির ছায়াছবি,
শুধু নীরব কবি আজও মুখর -
তাঁরই সৃষ্টিধারায় আমাদের হৃদয়ে
তোমারই আপন হাতের দোলায় দুলে ওঠে
অমিত'র প্রতি লাবণ্যের শেষ কথাগুলি
প্রতিধ্বনিত্ব হয় অন্তর থেকে অন্তরে আবহমান কাল ধরে।


"কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
     তারি রথ নিত্যই-উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ঠ আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।
              ওগো বন্ধু,
             সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল -
        তুলে নিল দ্রুতরথে
      দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
         তোমা হতে বহু দূরে।
           মনে  হয়, অজস্র মৃত্যুরে
      পার হয়ে আসিলাম
আজি  নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায় --
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
        আমার পুরানো নাম।
        ফিরিবার পথ নাহি;
        দূর হতে যদি দেখ চাহি
        পারিবে না চিনিতে আমায়।
        হে বন্ধু বিদায়।"............ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)