তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কল্লোল তুলে লঞ্চ ছাড়ছে,
কালো ধুঁয়ার ধস ধস আওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে
তোমার ক্লান্ত অপস্রিয়মাণ মুখশ্রী,-সেই কবে থেকে
তোমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।


তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার চলে যাওয়া কিছুতেই
শেষ হচ্ছে না, সেই কবে থেকে তুমি যাচ্ছো, তবু
শেষ হচ্ছে না, শেষ হচ্ছে না


বাতাসের সঙ্গে কথা বলে, বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলে
ধলেশ্বরীর দিকে চোখ ফিরাতেই তোমাকে আবার দেখলুম;
আবার নতুন করে তোমার চলে যাওয়ার শুরু।


তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কল্লোল তুলে লঞ্চ ছাড়ছে,
কালো ধুঁয়ার ফাঁকে ফাঁকে তোমার ক্লান্ত অপস্রিয়মাণ
মুখশ্রী, যেন আবার সেই প্রথমবারের মতো তোমার চলে যাওয়া।
তুমি চলে যাচ্ছো, আমি দুই চোখে তোমার চলে যাওয়ার
দিকে তাকিয়ে রয়েছি, তাকিয়ে রয়েছি।


তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কান্নার কল্লোল,
তুমি চলে যাচ্ছো, বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ,
তুমি চলে যাচ্ছো, চৈতন্যে অস্থির দোলা, লঞ্চ ছাড়ছে,
টারবাইনের বিদ্যুৎগতি ঝড় তুলছে প্রাণের বৈঠায়।
কালো ধুঁয়ার দুরত্ব চিরে চিরে ভেসে উঠছে তোমার
অপস্রিয়মাণ মুখশ্রী, তুমি ডুবতে ডুবতে ভেসে উঠছো।
তোমার চলে যাওয়া কিছুতেই শেষ হচ্ছে না,
তিন হাজার দিন ধরে তুমি যাচ্ছো, যাচ্ছো আর যাচ্ছো।


তুমি চলে যাচ্ছো, আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে তরঙ্গিত
নদীর জ্যোৎস্নায়, কালো রাজহংশের মতো তোমার নৌকো
কাশ বনের বুক চিরে চিরে আখ ক্ষেতের পাশ দিয়ে
যাচ্ছে অজানা ভুবনের ডাকে। তুমি চলে যাচ্ছো,
আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে আকাশের মতো।


হে তরঙ্গ, হে সর্বগ্রাসী নদী, হে নিষ্ঠুর কালো নৌকো,
তোমরা মাথায় তুলে যাকে নিয়ে যাচ্ছো
সে আমার কিছুই ছিলো না, তবু কেন সন্ধ‌্যার আকাশ
এরকম ভেঙ্গে পড়লো নদীর জ্যোৎস্নায়?
ভেঙ্গে পড়লো জলের অতলে? তুমি চলে যাচ্ছো বলে?


তুমি চলে যাচ্ছো, ল্যাম্পপোস্ট থেকে খসে পড়ছে বাল্ব,
সমস্ত শহর জুড়ে নেমে আসছে মাটির নিচের গাঢ় তমাল তমশা।
যেন কোনো বিজ্ঞ যাদুকর কালো স্কার্ফ দিয়ে এ শহর
দিয়েছে মুড়িয়ে। দু’একটি বিষণ্ণ ঝিঁঝিঁ ছাড়া আর কোনো গান নেই,
শব্দ নেই, জীবনের শিল্প নেই, নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার।
এ শহর অন্ধ করে তুমি চলে যাচ্ছো অন্য এক দুরের নগরে,
আমি সেই নগরীর কাল্পনিক কিছু আলো চোখে মেখে নিয়ে
তোমার গন্তব্যের দিকে, নিলীমায় তাকিয়ে রয়েছি।


তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার বিদায়ী চোখে, চশমায় নূহের প্লাবন।
তুমি চলে যাচ্ছো, বিউগলে বিষণ্ণ সুর ঝড় তুলছে
অন্তর্গত অশোক কাননে। তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার পশ্চাতে
এক রিক্ত, নিঃস্ব মৃতের নগরী পড়ে আছে।


অনন্ত অস্থির চোখে বেদনার মেঘ জমে আছে,
তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না।
তোমাকে দেখার নামে তোমার চতুর্দিকে পরিপার্শ্ব দেখি,
বিমান বন্দরে বৃষ্টি, দ’চোখ জলের কাছে ছুটে যেতে চায়,
তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারি না


তুমি চলে যাচ্ছো, আমার কবিতাগুলো শরবিদ্ধ
আহত সিংহের ক্ষোভ বুকে নিয়ে পড়ে আছে একা।


তুমি চলে যাচ্ছো, কতোগুলো শব্দের চোখে জল।