কলোসাস সিলভিয়া প্লাথের জীবদ্দশায় একমাত্র প্রকাশিত
কাব্যগ্রন্থ । ইংল্যান্ডে ১৯৬০ সালে এবং ইউ এস এ তে ১৯৬২ সালে কলোসাস প্রকাশিত হয় ।
কলোসাসে পাওয়া যায় একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবিকে । মৃত্যু,  প্রকৃতি , সমুদ্র, জল , বাৎসল্য রস , সম্পর্কের ভাঙচুর নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি কবি ।
কলোসাসের কিছু কবিতা আমেরিকার  যে এডিশনটিতে প্রকাশিত হয়েছিল সেটি থেকে কিছু  কবিতা বাদ  দেয়া হয়েছিলো । কিছু কবিতার সাথে Theodore Roethke  এর কিছু কবিতার সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে লিগ্যাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এই আশংকা ছিলো সম্ভবত । যখন প্লাথ নিজেই Reothke দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন । তবু ঐ সময় কবিতাগুলো শুধুমাত্র প্লাথের মৌলিকতা  এবং নিজস্বতা ছিলো এই ব্যপারে কোনো সন্দেহ ছিলো না ।
মাঝে মাঝে কোনো কোনো সমালোচক প্লাথের কবিতার অসামান্যতাকে খাটো করে উপস্থাপন করেছিলেন । এবং তার স্বামী টেড হিউজের লেখার প্রতি বেশী মনোযোগ আকর্ষণ করে সে ক্ষেত্রে সিলভিয়া প্লাথের অর্জনকে একটু খাটো করে দেখার প্রয়াস ছিলো ।
মৃত্যুকে প্লাথের কবিতায় বিভিন্ন দিক  থেকে দেখার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।
কলোসাসের প্রথম দুটি কবিতায় প্লাথ দুটি মৃত শরীরকে নিয়ে ভাবেন । “ Two views of cadavar  এ দুই অচেনা মানব শরীর অথচ বর্তমানে মৃত তাদের সাথে দুজন জীবিত প্রেমিক প্রেমিকার    বোঝার অবকাশের প্রয়াস এবং কবিতাটি শেষ হয় কিছুটা আশাবাদ দিয়ে । যেমন নিশ্চিত মৃত্যুর আগেও কিছুটা জীবন থাকে , মমীকৃত শরীর মিউজিয়ামে – সকল মৃতই সাহসী Bleaker  -এ Acknowledging that being e alive emplies eventual deathe “  কবি মনে করেন মানুষ আসলে মৃত্যুর বন্ড নিয়েই পৃথিবীতে আসে এবং অন্য কবিতাগুলোতে মৃত্যু যেন জীবনের মুক্তি , জীবনের কোলাহল , কষ্ট যাতনা থেকে মুক্তির পথ । বই এর মাঝামাঝি অংশে তিনটি কবিতায় মৃত্যুর আইডিয়াকে উপস্থাপন করেন মৃত প্রাণীর মধ্য দিয়ে ।
দুটো মৃত আঁচিল , সেখানে আছে fury, war এবং battle shouts – তারা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এবং এখন পাথরের মতই ধ্রুব তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
অনেকটা পারিবারিক অবস্থানের যে আবশ্যিক ধ্রুবতা জীবনের জন্য  ।jharrz medallion – এ কবি একটি মৃত সাপের কথা বলেন । যে হাসে , লাফায় , উদ্বেলিত হয় আনন্দে এবং উল্লেখ্য যে সাপটি আগুনের মত সুন্দর । তিনি অবশ্য সাপটিকে খাঁটি এবং মার্জিত বলেন ।কাব্যগ্রন্থের শেষের দিকে mussel  Hunterat Rock Harbor এ এই কবিতায় কাঁকড়ার মৃতদেহের কথাও উল্লেখ করা হয় । যদিও কাঁকড়ার শরীরের ভেতরের অংশ পরিষকারের কথা আছে তেমনি এর শরীরের বাইরের শক্ত খোলসকে ব্লিচ এবং পলিশ করা হয় এবং সাদা রঙ দ্বারা একে শুভ্র করা হয় । সাদা হলো  খাঁটি এবং ধ্রুবতার প্রতীক ।
পানি এবং সাগরের কথা প্লাথের কবিতায় বার বার অনুরণিত হয়েছে । প্রথম কবিতা Lorelei তে জার্মান মিথোলজি ব্যবহার করা হয়েছে । এবং এমন যে এটি মৃত্যুকে মিমোলাইজ বা প্রতীকি করতে পারবে । এবং মৃত্যুর মধ্যমে শীতলতা আসতে পারে ।
My sing of a world  more full and clear  than can be --
অন্য একটি কবিতায় একটি ডিমের খোসাকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে । এখানেও মৃত্যুর সেই দুঃসহ সৌন্দর্যের কথা সৌকর্যের কথা বার বার  এসেছে।
কলোসাস একটি শক্তিশালী এবং জটিল কবিতা । এখানে তার জনকের কথা বলেন ।
তার পিতা তার আট বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন । তার বাবাকে তিনি এখানে একটি শক্তিশালী খোদাই করা প্রতিমূর্তি হিসেবে ভাবেন । তাকে ইচ্ছে করলেই বাকশক্তি দিতে পারেন এবং  এমন যে প্রতিমূর্তি তার সাথে কথা বলতে পারবে। তিনি তার কানে রাতে থাকবেন যেন বাতাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন এবং স্মরণ করান যে তার জন্য আজ আর কোনো শিপ আসবে না  - কিন্তু  এই দুঃসহ স্মৃতির সাথে তিনি  চিরকাল থাকবেন ।
Daddy প্লাথের সাহসী এবং সহিংস কবিতা যেখানে তার বাবার কথা সরাসরি বলেছেন ।
এর স্তবক  অনেকটা ছড়ার মত এখানে তার বাবাকে তুলনা করেন ভয়ংকর পিতৃতান্ত্রিক ভ্যাম্পায়ারের সাথে , নাজি ,  শয়তানের সাথেও  । এবং নিজেকে তুলনা করেন কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পের ইহুদীর সাথে এবং শেষে ডিটেইলসে যেয়ে দেখান কিভাবে তার বাবাকে পেতে চান । পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন তার বাবার জায়গায় এখন তিনি তার স্বামীকে  উপন্যস্ত করেন । কিন্তু তার স্বামীও তার বাবার মতই অহংকারী এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তার বাবা এবং তার স্বামী দুজনের মৃত্যুই তার হাতে হবে ।
মানসিক ভাবে এবং নৈতিকতার দিক থেকে  Arielঅনেকটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে । এগুলো তার স্বামী টেড হিউজ প্লাথের মৃত্যুর পর আবিষ্কার করেন ।
এবং তিনি এগুলোকে ১৯৬৫ সালে একত্রীকরণ   করেন । এর অনেকগুলো কবিতাই  লেখা হয়েছিল হেমন্তের ১৯৬২ সালে । এবং টেড হিউজের সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পরে ১৯৬৩  সালের জানুয়ারীতে প্রধান প্রধান কবিতাগুলো প্রকাশিত হয় ।
Ariel এর কাহিনী শুরু হয় এক রমনীর ঘোড়ায় করে গ্রামাঞ্চলে পরিভ্রমেনের বৃত্তান্তের মধ্যে দিয়ে ।  একজন নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে যিনি এক ভোর সকালে পূর্ণ শক্তি এবং সাহস নিয়ে একটি ঘোড়া নিয়ে গ্রামের দিকে যান ।
সম্পূর্ণ নিশ্চল অন্ধকার হতে কবিতাটি শুরু যেখানে চালক ঘোড়ায় বসে অপেক্ষা করে । পাহাড় থেকে অদৃশ্য নীল আলো ক্রমশ স্পষ্ট  হয় ।  এবং চালক এখানে ঈশ্বরের সিংহী “। তার  অশ্বের জানুসন্ধি থেকে ,দ্রুতগামী খুড় থেকে নিজের ভেতর শক্তি অনুভব করা এবং চষা জমিতে সে অশ্ব নিয়ে নিজেকে বিলীয়মান করা মাটিতে এবং অদৃশ্য  অবস্থা থেকে ক্রমশঃ তার বাদামী যুদ্ধাশ্বের সাথে বিলীন হওয়া এবং অধরা থেকে যাওয়া এই কবিতাকে ভিন্ন মাত্রা দান করে । এখানে রমনী   নিজেকে একটি ঘোড়ার সাথে মেলান যেভাবে  নিজে জলন্ত সূর্যের সাথে উড়ে যান ।
হতে পারে এটি কবির  কবিস্বত্তার আত্তাহুতির একটা লক্ষণ অথবা হতে পারে তার নিজের আত্মহত্যার পূর্বসংকেত ।
Metaphorer এ কবি তার অন্তঃস্বত্তা অবস্থার মুখোমুখি । মেটাফোরিক্যাল ভাষায় এই সময়ের যুগপৎ আকর্ষন এবং বিতৃষ্ণার মনোভাব কবিতাকে হৃদয়গ্রাহী করে তোলে । প্রথমেই জ্ঞাপন করেন নিজেকে নয়টি সিলেবলের গুপ্ত রহস্যের(কবিতাটিও নয় লাইনের ) আধার হিসেবে ।  
এরপর নিজেকে ভাবেন একটি হাতি অথবা একটি বড় বাড়ি হিসেবে । অথবা হতে পারেন একটা তরমুজ যার দুটি ছোট পায়ে পদচারনা এবং নিজের উদরকে মনে হয়েছে লাল ফলের মতন , যার পা দুটো সুন্দর কাঠের ।
অথবা নিজেকে পাউরুটির ইস্টের সাথেও মেলান ,অথবা ভাবেন নিজেকে একটা নতুন টাকাসহ পার্সের মতন –
মেটাফোর ছোট কবিতা,একজন অন্তস্বত্তা নারীর শারীরিক অবয়ব  আলংকারিক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে ।ভারী এবং বড় শরীর নিয়ে  নারী এই সময়টায় অস্বস্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকে । তখন নারী  নিজেকে একটা হাতি অথবা একটা তরমুজ অথবা একটা লতানো লতার মতো ভাবে । যদিও সে জানে এই সময়টা তার শরীর চেহারা অসুন্দর এবং একটা গরুর ভেতরে বাছুরের মতো । সে জানে না সে এই সময়টায় কি করতে পারে ।


Edge প্লাথের একদম শেষের কবিতা যেখানে এক  মৃত নারীকে সত্যিকারের  নিখুঁত নারী হিসেবে চিত্রায়ন করা হয়েছে ।  এখানে সে নারী  খুশী যে অবশেষে একটা ক্লান্তিকর দীর্ঘ ভ্রমন শেষে তার রয়েছে দুটো মৃত ছেলে মেয়ে যারা তাকে পেচিয়ে আছে তার ভেতরে । এই কবিতায় অত্যন্ত নগ্ন ভাবে তার আত্মহত্যার ইচ্ছের বিষয়টি উঠে এসেছে ।
সিলভিয়া প্লাথের কলোসাস , এরিয়েল, ড্যাডি সহ  অন্যকবিতাগুলোতে  মহত্ত্বের ঘনীভূত হবার ব্যপারটি প্লাথ জানতেন । প্লাথ অবশ্য  সচেতন ছিলেন নিজের ভেতর অনুভব বিচ্ছুরিত হওয়া এবং তাকে মহত্তম অনুভুতি দিয়ে সার্বজনীন করার ব্যপারে   । তাঁর কবিতাগুলোর ভেতরে  শক্তির ব্যপারে নিশ্চিত ছিলেন । তার মা এর কাছে লিখেছিলেন এই বলে যে এই কবিতাগুলো হলো তেমনি কবিতা যেগুলোর দ্বারা মানুষ আমাকে মনে রাখবে । Larkin প্লাথের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন – তার কবিতাগুলো  বেশী প্রসারীত এবং উচ্চ তীক্ষন স্বরবিশিষ্ট যেটা সাহিত্যে আরো বেশী উচ্চকিত হবার দাবী রাখে । তিনি আশ্চর্য ছিলেন প্লাথের এই প্রতিভা নিয়ে যেটি সমাচ্ছন্ন এবং আবিষ্ট রাখে পাঠককে তার লেখার প্রতি ।
--------------------------------------------------