প্রথম অংশ -


বিশ শতকের দিকে এজরা পাউন্ড (১৮৮৫-১৯৭২) ছিলেন অন্যতম সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব। তিনি সময়ের সবচাইতে বিতর্কিত কবি। আধুনিক সাহিত্যকে বিশেষ ভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য এজরা পাউন্ডকে বিশ্ব বিশেষ ভাবে স্মরণ করবে। টি এস এলিয়ট বলেন -আধুনিক সাহিত্যের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য এজরা পাউন্ড এর কৃতিত্ব সবচাইতে বেশী। চার শতক পরে ডোনাল্ড হল পূনর্ব্যক্ত করেন – এজরা পাউন্ড এমন ব্যক্তিত্ব যিনি ইংরেজী সাহিত্যে প্রথম আধুনিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে কবিতার উৎকর্ষ সাধন করেন এবং এই ক্ষেত্রে যে কারো তুলনায় পাউন্ড এক হাজার বছর এগিয়ে আছেন।”


বিংশ শতাব্দীতে এজরা পাউন্ডের সাহিত্য এবং এর একটি মাত্রিক পরিবর্তনের জন্য তাঁর অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। ইংরেজী এবং আমেরিকান সাহিত্যের আধুনিকতা, বিষয় এবং আঙ্গিক নিয়ে নিরীক্ষা, প্রাচীন সাংস্কৃতিক নানা দিককে কবিতায় নিয়ে আসা এবং চিরাচরিত প্রথাকে অস্বীকার করার মাধ্যমে কবিতার মধ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। হিউজ কেনার বলেন ‘এজরা পাউন্ড কিন্তু এতটা চর্চিত হননি যতটা তৎকালীন সময়ের অন্য লেখক এবং কবি হয়েছিলেন। তার খুব বেশী পাঠক ও ছিল না। কবিতা এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি “টেকনিকেল কিছু রীতির উদ্ভাবন এবং অপ্রথাসিদ্ধ উপকরণ এর ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছিলেন। তাঁর কেরিয়ারের প্রথম দিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারনে বিতর্কের সম্মুখীন হন। কিন্তু এই শতকের একটা বেশী সময় তাঁর সমস্ত স্বত্বা কবিতায় নান্দনিকতা তুলে ধরার জন্য ব্যয় করেন।


তাঁর How I Began একটি সাহিত্যিক নিবন্ধ – এখানে তিনি দাবী করেন জীবনের তারুণ্যে তিনি স্থির প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে জীবনের পার্থিব সব কিছুর চাইতে কবিতাকেই সবচাইতে বেশী প্রাধান্য দেবেন।


এই লক্ষ্যে তিনি লন্ডনে ১৯০৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। সেখানে লিটারেরি এভান্ট গ্রেডের একজন সদস্য হিসেবে নিজের একটা সুনাম তৈরী করেন। এবং সমসাময়িক শিল্পকলার উপর কাজ করেন। যদিও তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন অনুবাদ, এমনকি তাঁর নিজের কবিতা বিশেষ করে তাঁর ক্যান্টস এর উপর, তথাপি পাউন্ড বিভিন্ন সংস্কৃতি বিশেষ করে প্রাচীন গ্রীস, চায়না এবং অন্যান্য মহাদেশ থেকে বর্তমান ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের কবিতার ঐতিহ্য অন্বেষণ করেন। In The Tale of the Tribe এর লেখক মাইকেল বেরন্সটেইন অনুভব করেন – পাউন্ড এর লেখা অনেক বেশী আধুনিক এবং পাশ্চাত্যের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙ্গে দেয়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো এবং যার উপর পাশ্চাত্য সাহিত্য মোদীদের অনেক বেশী বিশ্বাস ছিলো। শিল্পকলার নতুন একটা দিক নির্দেশনা তিনি দেন এবং এক্ষেত্রে পাশ্চাত্য লেখক জেমস জয়েস, টি এস এলিয়ট এবং রবার্ট ফ্রস্টের লেখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।


সমালোচক ডেভিড পারকিন্স আধুনিক কবিতার ইতিহাস লিখেন এবং সেখানে তিনি আধুনিক কবিতার উপরে পাউন্ড এর অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করেন – তিনি সেখানে দাবী করেন পঞ্চাশ বা তারো বেশী সময়ের কথা যদি বলতে হয় তবে এই সময়ে পাউন্ডই সর্বোৎকৃষ্ট কবি। কবি, সমালোচক এবং একজন ভালো মেধাবী বন্ধুদের সাথে তাঁর ব্যাক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি তিনগুন বেশী কৃতিত্বের দাবিদার। ১৯১৫ সালে একটি চিঠিতে হেরিয়েট মনরো বলেন- পাউন্ড নিজেই তাঁর এই কৃতিত্বের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে “একটি বিশেষ গোষ্ঠি যারা কবিতা লিখেন তাদের সচেতন রাখতে চাইলে কবিদের প্রাগ্রসর থাকা উচিত। এই জন্য শিল্পকলাকে একটা সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসা প্রয়োজন যেখানে শিল্প একটা সিভিলাইজেশনের জন্য বাতি হিসেবে কাজ করে থাকে।”


১৯১২ সালে পাউন্ড আইরিশ লেখক জেমস জয়েসের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পাউন্ড। জেমস জয়েস এর কিছু গল্প several of the stories in Dubliners (1914) এবং A Portrait of the Artist as a Young Man (1916) বই আকারে প্রকাশ হবার আগেই তিনি তৎকালীন সাহিত্য পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। জেমস জয়েসের দুঃসহ মূহুর্তে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন পাউন্ড রয়েল লিটারেরি ফান্ড, দি সোসাইটি অব অথরস ,ব্রিটিশ পারলামেন্ট এবং নিউ ইয়র্ক ল্”ইয়ার এর কাছ থেকে জয়েস এর জন্য অর্থনৈতিক সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। এবং জয়েস যখন তার পরিবার নিয়ে প্যারিসে আসেন তখন পাউন্ড তাঁর থাকার ব্যবস্থা এবং ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। জয়েস কে তাঁর ইউলিসিস এবং সিলভিয়া বিচের ভবিষ্যত প্রকাশকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।


নতুন লেখক এবং কবি যারা মাত্র লেখক/কবি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন পাউন্ড তাদের কাজের প্রচুর প্রশংসা করেন এবং উৎসাহিত করেন তাদের সৃষ্টিশীল হাতটি অব্যাহত রাখার ব্যপারে। নোয়েল স্টক তাঁর প্রথম রচনাটি পাউন্ডকে উৎসর্গ করেন এবং সেখানে পাউন্ড সম্পর্কে যে বিষয়টি ছিল সেটি ছিল এমন – এজরা পাউন্ড সৃষ্টিশীল মানুষ, বেশ কটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক, এবং তাঁর অকাতর হাত বাড়িয়ে দেবার প্রবণতা নতুন এবং অপরিচিত লেখকদের জন্য সে এক অসাধারন ব্যপার। এবং এসব বিষয়গুলোর জন্য এই প্রজন্মের কাছ থাকে তিনি কৃতজ্ঞতা পাবার দাবিদার।


“আর্নেস্ট হোমিংওয়ে বলেন -আমাদের এজরা পাউন্ডের মত কবি আছেন যিনি জীবনের এক পঞ্চমাংশ সময় কবিতার জন্য ব্যয় করেন কিন্তু বাকী সময়টা তিনি ব্যয় করেন তাঁর বন্ধুদের ব্যক্তিগত এবং শিল্প সাহিত্য মুলক কাজে। যখন তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের সর্বান্তকরনে সাহায্য করেন। এমনকি যারা জেল জরিমানার মুখোমুখি হয়েছে তাদের জেলের বের হবার ব্যাপারেও সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করেন। তিনি তাঁদের ছবি বিক্রি করে দিতেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করতেন এমনকি যারা হতাশার কারনে আত্মহত্যার মতন বিনাশী কাজে প্রবৃত্ত হতেন তাঁদের সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতেন। এবং অবশেষে দেখা যেত যাদের তিনি উপকার করেছেন তারাই তাঁকে কেউ কেউ প্রথম সুযোগেই আঘাত করেছে-
--
পরের পর্বে সমাপ্য