যে পথে গেলে আমায় পাবে, সে পথ তোমার সবসময় অচেনা মনে হয় ।  গ্যাসলাইটের ঘোলাটে আলোয় খিদিরপুরে তুমি আমায় দেখেছিলে, অনামী কোনো পানশালায় । তুমি নিয়ন আলোয় সেজে উঠেছো, রাতের পোষাকে । তোমায় দেখে আমি চোখ ফেরাতে চেয়েও, দৃষ্টি ফেরাতে পারিনি । আকন্ঠ তোমার বিষ আমায় পরিপূর্ণ করেছে । যেমন নৌকার গায়ে নদীর ছল্‌ছল্‌, তেমন তুমি নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলে আমায় । ডুবে গেলে যাবে, এখন আমায় ভুলে থাকো ।


আমায় জড়িয়েছিলে ওড়নায়, অজানা কোনও নামে ডেকেছিলে আমায় । আমি সাড়া দিতে চেয়েও পারিনি ।  সে সময় যখন অতিক্রান্ত, তুমি হাত বাড়িয়েছ । তোমার শরীরে ভুলিনি সেদিন, শুধু মদের দাম চুকিয়ে চলে এসেছি, যাতে কেউ চিনতে না পারে।


তার পরে তোমায় যেদিন দেখি, তুমি কোথাও যাচ্ছ । আমায় দেখে না চেনার অভিনয় করলে, যদিও আমি ঠিকই জেনেছি তোমায়।


পার্থিব লালাভ বর্ণিমা, কুয়াশা অস্থির রতি, রক্ত চাও


মার্জিত অসম, ত্বমঃ, তুহ অতি শৈব্যা যতি, চাও,


অর্থানর্থ ভাববার সময়, চেয়ে নিয়ো আমার শোণিত ।


অর্চনা দিও, আর অঙ্গীকার, বৃথা পাপ সংসর্গ ।


চন্দ্রচূড়া মানসী, অক্ষিপাতে চেও শাপিত ত্বরায় ।


সাঁঝ এলো বলে, সাধভক্ষণের সময় ঘনায় ।


সঞ্চার সন্ধান রহিত যে জন্মকথা, তা একান্তই তোমার আমার ।  আমরা কোনদিনই ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, এই উৎসবের ভিড়ে, আমাদের আলাপচারিতায়, ঈশান কোনে মেঘ জমে । সে অস্তরাগ বুকে নিয়ে, সুচিত্রা তুমি মোহিত করেছ আমায়, জলপথে সন্তরিতা হরিণীর ন্যয় । পেয়েছি আমি তোমায় অস্ফুট মূর্চ্ছনায়, ইতস্তত মৃতদেহের ভিড়ে, যেখানে শুধু তুমিই পূজিতা, সিংহবাহিনী রূপে । কোনও এক রাতে, শ্মশানে, মৃত্যুপুরীতে, আমি অপেক্ষা করেছি তোমার প্রার্থনায় । তার আগে আকন্ঠ গ্রহণ করেছি রুধির । সে সুরা পানে, মোহমুগ্ধ আমি, চেয়েছি তোমায়, রজনীগন্ধায়, আর সন্ধ্যাপ্রদীপে ।


সুচিত্রা, তুমি আমায় জানাতে পারতে


তুমি অভিনয় একটুও পারো না ।


যা কিছু বলেছ, তা মিথ্যা নয়


যা কিছু বলোনি, তা সত্যি নয় ।


আমি জেনেছি তোমায়, শেষ প্রদীপের আলোয়


আমি জেনেছি জন্মদিনে, একান্ত আপনে


তোমার মৃত্যু দিনে, আমার বিবাহ বাসরে ।