********************
সর্বাঙ্গসুন্দর এক যুবা অশ্ব, তায়
বড় বড় চোখ তার, পুরুষ পুরুষ-
“সমুদ্রে কেন যাস রে? কি বিপন্নতায়
এতবার করে যাস? বিবাগী বেহুঁশ?”


মর্মর উদ্ভিদ জাগে, শাখে লাগে দোল,
“যুবা অশ্ব, যুবা অশ্ব, পুরুষ পুরুষ,
সমুদ্র রহস্য টানে, টানে তার লোল-
চর্ম জ্ঞানবন্ত প্রেম, ধিকিধিকি তুষ।


উপকূল সংলগ্নতা দৈব অভিপ্রায়,
সম্ভাবনাহীন ঘোর একাকী যখন,
বিপুল বিষ্ময়ে দেখি কি অবলীলায়
ফসফার তরঙ্গে দোলে কবিতাযাপন!


বিশ্বজয়ী ঢেউ এসে চুমু খেয়ে যায়
নগ্নতায় বালুকায় পাযুগল পেলে,
পক্ককেশ শ্মশ্রু গুম্ফ পলকে হারায়
বল্কলে, বালক সেজে, কাটাকুটি খেলে।


আহা রতি, আহা তৃপ্তি, যুবা অশ্ব ওরে,
কি তীব্র সংবেগ জাগে যোনি ভরে যায়,
ঈশ্বরী, ঈশ্বরী আমি কবিতাশ্বরের
জেগে উঠি, নিদ্রা যাই আমি কবিতায়।”


নিবিড় আবেগে তার চোখ বুজে আসে,
পত্রবন্ত শাখা দোলে পাখির কূজনে,
তপোবন যেন এক ঘোটক সকাশে,
পদ্মবনে মত্ত অশ্ব আসে কি কুক্ষণে!


প্রেক্ষাপটে অস্তরাগ যুবক ঘোড়াটি
তন্বীতরু প্রদক্ষিনে প্রেম পাশ আঁকে,
পত্রপুটে কৃতাঞ্জলী নিরীহ নিপাটি
বড় বড় তার চোখ মেলে চেয়ে থাকে।


বরতনু শাখা ধীরে নিচে নেমে আসে,
দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় লহমার সাথে,
কাঁধ ছোঁয় ঘোটকের পরম আবেশে,
আলিঙ্গনে রত হয় হাত রেখে হাতে।


“আমি স্থানু, লবনাম্বু, প্রেমে অপারগ,
বিরহের মাঝে খুঁজি মিলনের স্বাদ,
বিচিত্র এ মনোগতি তবু হে তুরুগ,
যৌবনগন্ধে নেয়ে দেখো হয়েছি আবাদ।


যাও ফিরে যুবা অশ্ব রাজসূয় পথে,
আত্মবিস্মরণে বুঝি বেলা বয় হায়,
দিগন্তে ঐ জলোচ্ছ্বাস জোয়ারের রথে
আগুয়ান কলধ্বণি দেখো শোনা যায়।


এপথে ভুলেও আর কখনো এসোনা,
তরুসখি মরে গেছে একথাই ভেবো,
ক্ষণিকের ভুল মাত্র, ভালোও বেসোনা,
পান্থের পাদপ আমি, অতিথি যে দেবো।”


টলোমলো জলধারা তুরগের চোখে
কষে আরো আলিঙ্গনে প্রবল আবেগে,
প্রাণভরে প্রেমিকার অঙ্গরাগ শোঁকে,
না দেখে সাগর ধীরে উঠেছে যে জেগে।


বাড়ে জল আলিঙ্গন শিথিল না হয়,
গোড়ালি কোমর গেল গলাজল মাঝে
চিরায়ত চিত্রনাট্যে প্রবলের জয়,
অতলে তলালো ঘোড়া ঘোর এক সাঁঝে।


আকাশে গাঙচিল ওড়ে বিম্ব হয় জলে,
মাঝিমাল্লা পর্যটক কত কলরোল,
তটেতে শোভন এক তরুবেদীমুলে
দুরন্ত তরঙ্গ এসে করে ছলোছল।।