ফিরে এসো জীবনানন্দ!
ঠিক যা যা হয়ে তোমার ফিরবার কথা ছিল....
সহস্র নীহারিকা বুকে নিয়ে আমি অগাধ অপেক্ষমাণ...।
আমিওতো নক্ষত্রের তলে বসে আছি,
ভাঁটফুল তোমায় ডাকে,
ডাকে আকন্দের রেণু।
কাকের ডানায় আমি কৃষ্ণপক্ষ দেখি
দূর্বায় দেখি জীবন।
এমন ব্যস্ত ফেনিল ভুবনে বনলতা বড় ক্লান্ত
ধুসর চোখের জ্যোতি
কেন ফিরছো না তুমি?


শরতের কাশে, বসন্ত সুবাসে
বুকের বা পাশে
শুধু তোমাকেই চাই।
যেতে হয়না
ওভাবে যেতে হয়না.......
আমার এই শ্রাবস্তী আনন,
আরশী হৃদয় আমি কাকে দেব?


কাকে দেব এই ঝরে যাওয়া মন?
আমি ঝড়ের মতো
বৃষ্টির মতো
বকুলের মতো
ঝরে গেছি তোমার বুকে
তোমার শব্দে কবিতায়।


আমার ডানায় এখন হতাশার পোড়াগন্ধ
ফিরে এসো জীবনানন্দ;
পৃথিবী প্রেমশূণ্য হয়ে গেছে।
তোমার আকাশলীনা আকাশ থেকে
মহাকাশে ছড়িয়ে গেছে।
সুরঞ্জনা কথা বলেনা কোন যুবকের সাথে,
বনলতা সন্ধ্যার তন্দ্রায় শিশিরের মতো নিঝ্ঝুম
তুমি আসবে বলে।


অই ভোরের কাক, বৈকালি সুদর্শন
কিছুই কি টের পায়না?
কত শূণ্য ওদের সমস্ত জীবন
ঠিক কতটা অভিমান নিয়ে তুমি গেছো?
কেন এ বুক নিদারুণ
পাহারা দিচ্ছে পাহাড়ের ভার?
কেন তোমার দ্বারে আমি সকল চিঠি
অপাংক্তেয় নির্বিকার?


বিশ্বাস করিনা তোমার শরীর মিলিয়ে গেছে;
তোমাকে স্পর্শ করি দূর্বায়, ভাঁটফুল, ঘুঙুরে,
স্তব্ধ দুপুর আর বোবা-জল শীতল পুকুরে।
দেহ ঝরার আগে মন ঝরে যায় বলে
তুমি ঝরে গেলে!
নির্ঝর বকুলের মতো?
এ মহাকাল ব্যর্থ
ব্যর্থ এ ধরাতল
ভাঙতে পারেনি অভিমান,
ফিরে এসো জোনাকি হয়ে
তোমার ডানায় হবে আমার উড়ান.....


আমি উড়তে চাই, পুড়তে চাই;
গলে যেতে চাই পলির মতো ধানসিঁড়ি জলে
বাংলার জল আর বাতাসে আবেগচিহ্ন এঁকে
তুমিই তো এঁকেছ আমায়!
এই আমি
এই বনলতা
সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে
কতটা হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছি,
কেউ কী জেনেছে কখনো?
কার্তিকের সানকিতে খুঁজি তোমার একবেলা খিদে,
সব ধান লুটোপুটি খায়
খই-ফুল ফোটেনি বলে।


আমি টের পাই
বেশ টের পাই
কতটা অতৃপ্তি নিয়ে তুমি ত্রিকাল ভ্রমণ করো,
কতটা উচাটন অই মন, অই রূহ!
তুমিহীন ভূমিহীন আমিও বিলীন
প্রশ্বাস হয়ে গেছে দূরুহ।


সমুদ্রের জলে স্নান করতে বলে
উবে গেলে কোন আকাশে?
বাতাসে আঁচল ছড়িয়ে
পবিত্র সাগরে নিদারুণ সিঞ্চিত হয়ে আছি।
এই আমি অপেক্ষার পেন্ডুলামে
কী অসহায় বাঁচি!


স্পর্শ তোমার চাইছে ভীষণ,
আমার এই জলাঙ্গী জীবন
ফিরে এসো জীবনানন্দ......................