রুপার স্বামী থাকে বিদেশ
কষ্টে নাকি আছে রুপা
তিন বছর পর গেলে ছুটি
খুশিতে খেয়েছে রুপা লুটোপুটি।
পুরো শীত কাটিয়ে ছিলো এক মশারীতে
জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো রুপা স্বামীকে
স্বামীর মনে অন্যের বাস, রুপা গড়তে পারেনি আবাস
দ্যাখতে দ্যাখতে কেটে যায় তিনটি মাস
বন্ধ হয়ে আসতে চায় রুপার শ্বাস।
পড়ন্ত বিকেল ক্ষানিকটা পরে নেমে আসবে গোধুলি
প্রকৃতির সাথে মাখামাখি করতে যখন রুপার স্বামী বের হবে
এমনিতেই হঠাৎ বলে উঠলো "ভালা আছেন্নি জামাই? দাওয়াত দিতে আইছি"।
ওহ্! এ দিহি রুপার মা " হুম, ভালোই"।
যখন চারপাশে বসন্তের আগমনী গান হচ্ছিলো
সবুজ ধানক্ষেত মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছিলো
তখন সময় হয়ে আসে রুপার স্বামীর প্রস্থানের।
রুপার স্বামী প্রবাসে যাওয়ার পর
রুপা চলে যায় বাপের বাড়ি, খোলে অভিযোগের ঝুলি
তিনটি বছর ছিলো বিদেশ কথা ব'লেনি ফোনে
বিদেশ থেকে আসার পথে কিচ্ছু আনেনি কিনে।
আশায় বুক বেঁধে কষ্টে কাটিয়ে ছিলাম দিন
আসার পর চোখ থেকে হারিয়ে গেলো নিন্দ্।
কথা ব'লেনি মন খোলে, জড়িয়ে ধরেনি বুকে
মৃত মানুষের মতো শুয়েছিলো শীতের কম্বল মুড়িয়ে।
একটি বারের জন্যও কাছে টানেনি, রাখেনি ঠোঁটে ঠোঁট
ওপাশ ফিরে ঘুমিয়েছে, টেনেও লাগাতে পারেনি বুকে মুখ।
আমি যৌবনবতী নারী, শিরা-উপশিরায় কামভাব  
প্রতিটি নিশ্বাসে বেরিয়েছে কামের উত্তাপ।
নিজের গোস্তে নিজে খামচি মেরেছি, দাঁতে কেটেছি নখ
কখনো ভাবিনি ওনি এসে দেবে আমায় এতো শোক।
আশি বছরের বৃদ্ধ মৃত্যুর পথযাত্রী, চোখে দ্যাখে অন্ধকার রাত্রি
তার মুখোমুখি যদি দাঁড়ায় বাইশ বছরের যৌবনারম্ভ পাত্রী
সরে যাবে অন্ধকার রাত্রি, জেগে উঠবে কামভাব
পাশাপাশি শুয়ে কিভাবে কাটিয়ে গেলো আমার সাব।
এখানেই কি শেষ, কথা জমে আছে বেশ
খরচ দেয়নি কানাকড়ি, কিভাবে এই অধমের সংসার করি।
অসুস্থতায় কাঁদতাম শুয়ে, দ্যাখতো না একটু ছোঁয়ে
গড়াগড়ি খেতাম বিছানায়, কাছে টানতে পারিনি কোন বাহানায়।
রাতের খাবার শেষে, কোথায় যেন যেতো মিশে
অর্ধরাত্রিতে ফিরতো ঘরে, বালিশ ভিজতো মোর চোখের জলে।
আমি তো বৃদ্ধ হয়নি, ঝরে যায়নি যৌবনের ফুল
কেন কেঁদে ভাসাতে হয় আমার দুকূল।
কিভাবে কাটিয়ে গেলো তিনটি মাস
আমার জন্য তার হৃদয়ে গজায়নি সবুজ ঘাস।
মোবাইলে দেখিয়ে প্রিয়তমার ছবি
ঠোঁটে চুম্বন দিতো বসে মুখোমুখি
গোঁখরো সাপের মতো গোস্বায় করতাম ফোঁসফাঁস
কেন আমায় শাস্তি দিচ্ছো? কি'বা আমার দোষ?
মনে যদি শান্তি থাকতো খেতাম কোরমা পুলাও রোস্ট।
এক সন্তানের মা আমি যাইনি ফুরিয়ে যৌবন
রাস্তায় নেমে দাঁড়ালে অনেকে এনে দিতে চাইবে ভুবন।
অনেক চেষ্টা করেছি, হাতে পায়ে ধরেছি
গরম নিঃশ্বাস ছেড়েছি ঘাড়ে
নামাজ শেষে প্রার্থনা করেছি জায়নামাজে বসে
আকৃষ্ট হয়নি সে আমার যৌবনের রসে
কুফরি করে চেয়েছিলাম আনতে বশে
হিতে বিপরীত হয়ে ঘুরে ছিলো পাগলের বেশে।



আমার এ নিদারুণ কষ্ট দ্যাখে, শাশুড়ী মোর মুচকি হাসে
শাশুড়ীর মন ভুলানো কথায় সেজে ছিলাম বিয়ের সাজে।
আমার ব্যাথায় ব্যাথিত নয় তারা
তাদের আকাশে উদিত হয় সুখের তারা
জানতে চায়নি শাশুড়ী, এতো কষ্টে কিভাবে দিনাতিপাত করি
আমার বদনাম করেছে সারা পাড়া ঘুরি।
টিনের চাল টিনের বেড়া, বেড়া যে মরিচা ধরা
একচোখে মারলে উঁকি, দেখা যায় আঁকিবুঁকি
তাকিয়ে দ্যাখতো শাশুড়ী, প্রমাণ আছে ঢের।
বাপ ভাই চাচা, সব কইতাছি হাছা মিথ্যা বিন্দুমাত্র নাই
বহুবার ধরেছি আমি আমার শাশুড়ীর পায়।
গতবার যখন এসেছিলাম বেড়াতে
নন্দের জামাইকে জানিয়ে ছিলাম গোছাতে
ইচ্ছে মতো গালি দিয়ে ছিলো আমার শাশুড়ী মা'কে।
এমন সুন্দর করে ব'লেন কথা
নড়তে চায়না গাছের পাতা
নিমিষেই গলে যায় মন, ইচ্ছে করে দিতে সব ধন।
পান্তা ভাতে বিড়াল বেজার, আমার আনন্দে শাশুড়ী
শাশুড়ী তো নয় যেন পুরো উঠার নাচুনি।


এ কথা শুনে রুপার মুখে
রুপার বাপ-ভাই-চাচা আসে ঝুকে
নানান কথা শুনিয়ে যায় রুপার শশুর শাশুড়ীকে
এই দ্বন্দ্বের কলকাঠি না-কি শাশুড়ীর হাতে।
বিড়বিড় করে বলছিলো রুপার শাশুড়ী
এতো সখ করে এনেছিলাম ঘরে
বেকার ছেলে তারপরও ত্রুটি রাখিনি কাপড়চোপড়ে।
বৃদ্ধ বয়সে এমন কলঙ্ক পড়বে এসে ঘাড়ে
সাধ করে আনতাম কি কভু আমার এই সোনার ঘরে।
তাকে যদি না আনতাম বাড়ি
মেল কি বসতো আমার উঠোন জুড়ি।
বউয়ের চাচাতো ভাইয়ের চোখ রাঙানো কথা
বাপ-চাচার নিষ্ঠুর, নির্মম পরিহাস
রচিয়ে যায় এক নব ইতিহাস।
এমন কথা শুনে আঘাত আসে শাশুড়ীর মনে
শিথিল হয়ে আসে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন
মৃত্যুর সাথে লড়ছে পাঞ্জা
বউয়ের তপ্ত হৃদয় হচ্ছে ঠান্ডা।
রাজ করতে পারবে পুরো বাড়ি
শকুনির মতো বসাবে খামচা
বুকেপিঠে এঁটে গামছা
পথের লোক ডেকে এনে করবে তামশা।


এমন কথা শুনে রুপার স্বামী বলে ফোনে
সেইদিন কোথায় ছিলো তোর বাপ ভাই চাচা?
আমাকে তোর অধীনস্থ করতে তন্ত্রমন্ত্র পাঠে
কুফরির তাবিজ গেঁড়ে ছিলি চুলার কিনারে
যার প্রভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ছিলাম
নগ্ন হয়ে ঘুরেছিলাম সমস্ত উঠোন
নিজের বুকে নিজে চপেটাঘাত করে
গলাটিপে ধরেছিলাম নিষ্পাপ কন্যার।
সেইদিন কোথায় ছিলো তোর বাপ ভাই চাচা?
বিষের প্রভাবে উদ্যত ছিলাম ঘর ছাড়তে
চিনতে পারিনি মা-বাপ, ভাই-বোন আঁকড়ে থাকা ধন
সেই থেকে আমি করেছি পণ
আমার এক মাসের কষ্ট তোকে ভোগতে হবে আজীবন।
ভোগ করে চেটেপুটে খেতে পারবে দেহ
এই মনে রাজত্ব করবে অন্য কেহ
ঠাঁই নেয় তোর মম হৃদয়ে
হৃদয় জুড়ে যে মোর প্রিয়া বসত করে।
তার আশে স্বপ্ন দ্যাখি, ঘুড়ি উড়াই, ফুল ফুটাই
দাড়িয়ে থাকবো খেয়াঘাটে, শেষ খেয়া পাড়ি দিবো না প্রিয়তমা বিহনে।


সৌদি আরব
১৭ মার্চ ২০২২ ইং।
(রুপা নামটি একটি কাল্পনিক নাম)