আমরা ছিলাম চারটি ভাই একই বৃন্তে গাঁথা
তিন ভাইয়ের মাথায় তপ্ত রোদে বড়ভাই ধরতো ছাতা।
নিপু ছিলো সবার বড়ো পড়তো মাদ্রাসা
হক্কানি আলেম হয়ে পূর্ণ করবে বাবা-র আশা।
হঠাৎ একদিন গোধূলি লগ্নে যমদূত দেয় হানা
ভাইয়ের আত্মা নিয়ে বাবার স্বপ্ন করে দেয় কানা।
আধাঘন্টা আগে হাসিমুখে কথা বলে যাওয়া ভাই
আধাঘন্টা পর তাঁর দেহ খাঁচায় আর প্রাণ নাই।
পশ্চিম ঘরের মাটির উপর পড়া ছিলো নিথর দেহ
"বিষধর সাপে কেটেছে" বলতেছিলো কেহ।
দ্যাখেছিলাম বাবার কলিজা ফাঁটা কান্না
দুই চোখে বয়েছিল লোনা জলের বন্যা।


আমি ছিলাম মেজো, উড়নচণ্ডী - বাউণ্ডুলে --
আমায় নিয়ে স্বপ্ন দ্যাখেনি বাবা কোনকালে।
বনজঙ্গল ঘুরে খুঁজে বেড়াতাম পাখির ছানা, টরফুই, ছাগলনাদি
ইচ্ছে মতো বকতো বাবার মা, আমার দাদী।
হাতে থাকতো দা, কতোবার কেটেছি মোর হাতপা
ভাল্লাগতো না পড়াশোনা, লুকিয়ে রাখতাম গা।
গা ভর্তি আঁচিলের কারুকার্যে শান্তশিষ্ট কুনোব্যাঙ
দক্ষিণ ঘরে ঘুরে বেড়াতো করে ড্যাং-ড্যাং।
একলা ঘরে যখন আমার ভেঙে দিতো ধ্যান
শূলে চড়িয়ে মেরেছিলাম শতশত কুনোব্যাঙের ঠ্যাং।
আমার উপর লেগেছিল নির্দোষ, নিরপরাধের অভিশাপ
না বুঝে করেছিলাম খুন শতশত নিষ্পাপ।
আমাকে দ্যাখে পাড়াপড়শি গালে টোল ফেলে হাসতো --
ক্যামন এক বসন্তের বাতাসে ভাসতো।
এই একটি ভুলে --
পেট গিয়েছিলো মোর কুনোব্যাঙের মতো ফোলে।
যখন শুনি নিহত কুনোব্যাঙের বাঁচার চিৎকার
নিজে দেই নিজের উপর ধিক্কার।


টিটু ছিলো সেজো, দুষ্টুর শিরোমণি --
তাঁর মুখে ছিলো গালাগালির খনি।
পাড়াপড়শি যে কেউ আসলে বাড়ি
ফিরে যেতো না কখনো ওঁরা খালি।
উস্কে দিতো তাঁকে শুনতে মুখের গালি
বিবস্ত্র হয়ে শুরু করলে হাতে দিতো তালি।
সেজোর ছিলো একটি নিড়ানির ভোঁতা কাঁচি
বাঁশের আগা দিয়ে সারাদিন বানাতো বাঁশি।
ছোটবেলার পাগলাটে সেজো সময়ের বিবর্তনে হয়ে যায় নিবৃত্ত
নম্র-ভদ্র-বিনয়ে হৃদয়-গা-মস্তিষ্ক আবৃত।


টিপু ছিলো সবার ছোট শান্তশিষ্ট স্বভাব
চলাফেরা ছিলো তাঁর শাহজাদা-নবাব।
নতুন নতুন টিশার্টে ভরা থাকতো হেংগার
সারাদিন মাঠে থাকতো পা ধরে ঠ্যাঙার।
সবার ছোট ছিলো বিধায় আদরে উঠেছিল বেড়ে
শাকসবজি একদম খেতো না মাংস পেলে।
খেলাধুলায় থাকতো মজে দিবানিশি
ভাল্লাগতোনা তাঁর বাড়ির আনাচে-কানাচে কৃষি।