একদা ফুল তুলতে সীতা,গেলো বনের গহীন ৷
চাক্ষুষ দেখতে পেল,একটি সোনার হরিণ ৷
ভাই লক্ষণ,রামচন্দ্রকে;দেখাল শ্রী নয়নে ৷
সেই হরিণকেই ধরার বায়না;এল সীতার মনে ৷
আশা দিল শ্রীরামচন্দ্র,আনিবে তাঁকে ধরিয়া ৷
ভাই লক্ষণও চাইল যেতে,রামের সঙ্গ পাইয়া ৷
পত্নী সীতার নিঃসঙ্গতায়,রাম ভাবিয়া কহে ৷
ভাবিয়া কাজ করা উচিত,করিয়া ভাবা নহে ৷
বিপদাগমনে নিশ্চয় আমি ডাকিব কন্ঠ ছেড়ে ৷
তখন তুমি চলিয়া যাইও,বাঁচাইতে আমারে ৷
সীতার প্রতি খেয়াল রেখো,যেও না কোথাও চলে ৷
বিমলা সীতা নয়তো পড়বে বিপদসঙ্কুলে ৷
সোনার হরিণ ছদ্মবেশী রাবণের এক দূত ৷
রামের আগমনে হরিণ করল,মায়া অদ্ভুত ৷
হরিণও ছোটে,রামও ছোটে;তীর ছুড়তে ছুড়তে ৷
অবশেষে মায়ার ছলে চাইল হরিণ বাঁচতে ৷
শ্রীরামচন্দ্রের কন্ঠ ধরে ডাকিল--"ভাই লক্ষণ ৷"
পবন বেগে ছুটিয়া আসো,নইলে আমার মরণ ৷
ভাই লক্ষণের দৃঢ় বিশ্বাস;এ রামের গলা নয় ৷
অপরদিকে,সীতার মনে পতী-বিঘ্নের ভয় ৷
সীতার আদেশ লক্ষণকে,শীঘ্র ছুটে যাও ৷
আমার চিন্তা ফেলে রেখে,দাদাকে বাঁচাও ৷
চিন্তামগ্ন লক্ষণ সীতার আদেশ মানিল ৷
সীতার নিকট শর্ত রেখে,পুনরায় বুঝাইল ৷
শর্ত দিয়া লক্ষণ হস্তে কাটিল লক্ষণ গন্ডি ৷
প্রবেশ করতে পারবে না কেউ,যতই আঁটুক ফন্দী ৷
ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি,গন্ডি পার হইও না ৷
যে-যাই-যতই বলুক,শুনিও না কারো বায়না ৷
এমতাবস্থায় সীতার আদেশে লক্ষণের প্রস্থান ৷
ডাকানুসারে খুঁজতে লাগল রামের অবস্থান ৷
অবশেষে লক্ষণ পেল রামের দর্শন ৷
রামও অবাক,সশরীরে দেখে লক্ষণ ৷
তুমি কেন বনের গহীনে সীতাকে একা ফেলে ?
রামের আদেশ নির্দ্ধিধায়,তবে ভাঙিলে ?
তোমার আর্তনাদ শ্রবণে সীতা হয়রাণে ৷
আদেশ দিয়ে পাঠাল হেথায় পতির অন্বেষণে ৷
আমি তো কভু ডাকিনি তোমায়;পরিনি তো কোনো বিপদে ৷
তবে এ কাজ নিশ্চয় করেছে,কেউ ময়াবী শক্তিতে ৷
লক্ষণের সান্ত্বনা রামের প্রতি,ভয় নেই মাতা সীতার ৷
গন্ডিখানি কাটিয়া এসেছি,অক্ষম করিতে পার ৷
ইতোমধ্যেই সংবাদ শুনে রাবণের ছদ্মবেশ ধারণ ৷
ভিক্ষুক রূপে সীতা মাতার কুটিরে আগমন ৷
অক্ষম ছিল,গন্ডি পেরিয়ে কুটিরে প্রবেশ করতে ৷
'ভিক্ষা','ভিক্ষা' করে রাবণ;রইল সীতার প্রতীক্ষাতে ৷
ভিক্ষুকের ডাক কানে যেতেই,সীতা বাহির হল ৷
ভিক্ষুকের তরে হাতে করে ভিক্ষার আধার আনিল ৷
গন্ডির এক পাশে সীতা,অপর পাশে রাবণ ৷
গন্ডি পার করে দিলেই করবে ভিক্ষা গ্রহণ ৷
সীতা নাহি বুঝতে পারিল;ধূর্ত রাবণের ছল ৷
গন্ডি পারের অনিচ্ছুকতায় আবেদন নিষ্ফল ৷
ভিক্ষুক রূপী রাবণ কহে,"নিবো না তোর ভিক্ষা ৷"
একটু পরেই বুঝতে পারবি,স্বামীর উচিত শিক্ষা ৷
এমতাবস্থায়,ভাইয়ের কথা অমান্য করতে বাধ্য ৷
রাবণ মনে ভাবে--এবার কার বাঁচানোর সাধ্য ?
গন্ডি পার হতেই রাবণ,ফেলল আধারের ভিক্ষা ৷
চিকুর ধরে যাচ্ছে নিয়ে,দিতে নবীন দীক্ষা ৷
ছদ্মবেশী ভিক্ষুক এবার,ধরল রূপ রাবণ ৷
জোরপূর্বক টেনে নিয়ে করল সীতা-হরণ ৷
উড়ন্ত এক রথে করে যাচ্ছিল নিয়ে তাঁকে ৷
ক্ষণে ক্ষণে সীতা শুধু রামচন্দ্রকে ডাকে ৷
কন্ঠ,হস্তের অলঙ্কার সব ফেলছে মাটির বুকে ৷
রামচন্দ্র,লক্ষণ যাতে বুঝতে পারে দেখে ৷
এমতাবস্থায় হাজির জটায়ু,মাতা উদ্ধারের চেষ্টায় ৷
রাবণের অস্ত্রাঘাতে পড়ল,একটি ডানা কাটায় ৷
অপরদিকে,ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রবেশ কুটিরে ৷
হেথা-হোথা এত খুঁজেও,পেল না সীতারে ৷
কিছু দূর দৌড়ে যেতেই মিলল সীতার গহনা ৷
অপরদিকে,ডানাকাটা জটায়ুর মরা-কান্না ৷
শীঘ্র ছুটে গেলো সেথা,ভ্রাতৃদ্বয় তা দেখতে ৷
জটায়ুর মুখের বর্ণনাতে,পরিষ্কার পারল বুঝতে ৷
প্রভু দর্শনে জটায়ুর অন্তিম ইচ্ছা পূর্ণ হইল ৷
তাইতো,সে চিরতরে ইহলোককে ছাড়িল ৷
এমতাবস্থায় শ্রীরামচন্দ্র দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল ৷
রাবণ সনে যুদ্ধ ঘোষণা,মনস্থির করল ৷
রামের সাথে লক্ষণ,বিভীষণ আর ছিল হনুমান ৷
আর,রাবণের লঙ্কা একদিন ধ্বংস রূপক মহাশ্মশান ৷