চাকরি করে খাই। সময় কোথায় এতসব বুঝিবার?
গম্ভীর নিপাট ভদ্রমহিলার মতোন চেয়ে থাকে নিরুপমা,
সন্ধ্যা হবার পর। একটি কাগজের পাখা হাতে করে
বসে থাকে জানালার ধারে, বাসে। অদ্ভুত চুপচাপ!
নিরুপমা, তোমার মন খারাপ?


একনলা বাঁশের বাঁশির সুর বাজে না বহুকাল।
শর্ষে ক্ষেতের আলে বসে নির্জন আলোর ঝিকিমিকি,
রং দেখিবার সময় ফুরিয়ে গেছে নিরুপমার।নেই।
সাঁতার কাটিবার আগে গাঁয়ের ধারের নদীটি মরে গেছে!
গোপনে খবর নিত যে, সেও গেছে মরে, একা।পৃথিবীর
আলো ছায়ায় ঘন জনমানবের ভিড়ে খোঁজ নেবার কেউ নেই!


আশ্বিনের গরম আর ফেরীওয়ালার হাকডাকে বিষাদ, নিরবতা।
রাত্রি নামিবার বহু আগে মৃদু অন্ধকারে ছেয়ে গেছে দিন,
সারাদিন কাজের ভারে নুব্জ, ক্লান্ত দিন; চোখ বুজে আসে ঘুমে।
ছিমছাম যুবকেরা চলে যেতেছে পাশ কাটিয়ে পেছনের সিটে!
একটি কাগজের পাখা হাতে করে নিরুপমা বসে থাকে জানালার ধারে,
চুপচাপ। নিরুপমার চোখের নিচে কালি!


গত বোনাসের টাকার ঘ্রান ভুলে গেছে নিরুপমা, কবেকার কথা!
ঋণের বোঝা বাড়িবার আগে, আবারও যদি পাওয়া যেত বোনাস!
কালের বিপাকে এবারও বেতন বাড়িবে না আর। আহ! নিরুপমা নিশ্চুপ!
অফিস বাসের ভাঙা জানালা দিয়ে হাত বাড়ায় হাড্ডিসার ভিক্ষুক,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যেত আবার! নিরুপমা নিশ্চুপ!
মা আর বোনটা কেমন আছে? আর কিছু টাকা হাতে হলে পাঠাবে, ঘরে।


শহরের অদ্ভুত ভিড় ঠেলে ঘর্মাক্ত নিরুপমাও ভাড়া করা ঘরে ফেরে;
একা। ক্লান্ত শরীরে রাত্রি নামে আবার। নিরুপমা ক্লান্ত!
সস্তা বিছানায় শরীর এলিয়ে দেবার পর, লালচে আবছা আলোতে
গোপন ব্যথাগুলো আবার কেন জেগে উঠিতে চায়? আহ!
আলো ছায়ায়, ঘন জনমানবের ভিড়ে, গোপনে খবর নিত যে,
অবহেলায় সেও মরে গেছে, ভাড়া ঘরের খসে পড়া পলেস্তার মতোন!
প্রেমের সময় আসিবেনা আর।নিরুপমাও চাকরি করে খায়।