২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯।
বাংলাদেশের রক্তাপ্লুত ইতিহাসে আরো একটি কালো দিনের নাম যুক্ত হলো
এক ভয়াবহতম নিষ্ঠুর, বর্বর, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য।
এ জাতির প্রত্যেকের হৃদয়তন্ত্রীতে চিরজাগরূক থাকবে, অম্লান হয়ে থাকবে
এ বেদনাভরা শোকাবহ নজিরবিহীন ইতিহাস।
ভোলা যাবে না, ভোলা যাবে না কোনমতে
পিলখানা এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীর নাম
শোকের অন্য নাম যেন পিলখানা।
নির্বাক জনতা, দেশ ও জাতি! স্তম্ভিত মানবতা!
কি শিশু! কি বৃদ্ধ-আবাল-বণিতা!
চারদিকে শুধু কান্না, আহাজারি!
তারা আজ হারিয়ে ফেলেছে ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখে অর্জিত মায়ের ভাষা!
রক্তের অক্ষরে লিখা কথামালা, চির দুঃখিনী বর্ণমালা।
মা গো, একদা একদল শত্রুসেনা তোমার ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো
এখন আরেক দল তোমার স্বাধীন-সত্তাকে, ইজ্জতকে ছিনিয়ে নিতে
তোমার দামাল ছেলেদের হত্যা করেছে।


ওদের প্রয়োজন ছিল কিছু কুচক্রীর
কিন্তু ওদের পথে পাহাড়সম প্রতিরোধ হয়ে ছিলেন,
মেজর শাকিল, মেজর গাজ্জালী আর কর্ণেল গুলজারেরা..
তোমার মর্যাদার জন্য হাসিমুখে, নির্ভীক চিত্তে জীবন দিয়েছে।
এরা এক একজন ইতিহাস, এক একটি ইতিহাস রচনাকারী তোমার বীর সন্তান,
তুমি বীর প্রসবিনী, তাই তুমি সার্থক, তুমি ধন্য মা গো,
তুমি ব্যর্থ হলে, অকার্যকর হলে, পঙ্গু হলে, বন্ধ্যা হলে বীর সন্তান কেউ জন্ম দিতে পারে?


যারা চলে গেছে পরপারে মহামহিমের কাছে
তুমি তাদের জন্য অশ্রুপাত করো না, দোয়া করো শুধু।
ওরা তো জাতির কান্ডারী,
জাতির কর্ণধার, জাতির আশার আলো,
জাতির বীর সেনানী, সিপাহশালার
জাতির আকাশে এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র,
তোমার বিরুদ্ধে কত ষড়যন্ত্র ওরা নস্যাৎ করে দিয়ে তোমাকে ফুলে ফলে সুশোভিত করেছে।
তাদের কোন অপরাধ ছিল না,
তারা তোমার ইজ্জতকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয় নি
তারা তোমার মর্যাদা ধুলো লুটোতে দেয় নি
ওরা জান দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তোমার মান দেয় নি।
ওরা শত আকুতি জানিয়েও বাঁচতে পারে নি
ওরা কারা?
যারা ঐ সকল বীরদের হত্যা করেছে
তারা কোন্ কুচক্রী? কাদের ষড়যন্ত্রের ক্রোড়ে তারা লালিত?
তাদের স্বরূপ উদ্ঘাটিত কি হবে না?
সবাই বলছে এটা বিদ্রোহের ফসল,
আমি বলি না, এটা ষড়যন্ত্রের ফসল
ভাইয়ের বুকে ভাই এমনি করে গুলি চালাতে, লাশ গুম করতে,
লাশ পুড়িয়ে দিতে,
কেউ কি দেখেছে কখনো?


মা গো তোমার জন্ম কি কেবল কান্নারই জন্যে?
এবার তুমি এই মহাশোককে শক্তিতে পরিণত করে উঠে দাঁড়াও
আমরা তোমার কান্না জড়িত মুখটি আর দেখতে চাই না।