একটি সত্য কাহিনী
মামার মুখে শুনেছিলাম,
মূলত  আমি আর মামা
সমবয়সী।তাই একসাথে
লেখা-পড়া,খানা, আড্ডাবাজী
সবকিছুই চলতো আমাদের
মাঝে! প্রাইমারী,সেকেন্ডারি,
হাইয়ার সেকেন্ডারি,বিদ্যাপিঠের
শেষ পর্যন্ত আমি আর  মামা ছিলাম
দু'টি দেহ একটি প্রাণ। এখনো তাই
আছি,তবে আছি একই পৃথিবীতে
দুইজন দুই প্রান্তে। মন আছে ঠিক
আগেরই মত!! কাহিনী শুরু করা
যাক,
ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার
মামা,টিউশনি করত,
শহরের এক অভিজাত ভিলায়।
প্রতিদিন,বিকেল হলেই যেত স্টুডেন্ট পড়াতে।
পড়াতো একটি মেয়েকে,
মেয়েটি সুন্দর স্বভাবের ছিল,
রুপে গুনেও ছিল সেরা,
কোন অহংকার ছিলনা।
তবে কাহিনী এখানে নয়!
মামার লক্ষ্য ছিল অন্যরকম,
তিনিও খুব সৎ স্বভাবের।
একটু নিজেকে বাঁচিয়ে চলতেন,
অন্যের কাছ থেকে। কোন ঝামেলা
পছন্দ করতেন না। কিন্তু মন বলে কথা,
মন থাকলেই মানুষ হয়।
অথচ মনের দাম,
আমাদের মাঝে কানাকড়ি ও নেই!
হঠাৎ একদিন পড়াতে গিয়ে দেখল,
এত সুন্দর একটি মেয়ে ওই বাসাতে
সে আর আগে কখনো দেখেনি।
এই প্রথম দেখা। মামা জিজ্ঞেস করল
তোমার নাম কি? মেয়েটি কোন কথা
না বলে আড়াল হয়ে গেল।
মামা, হতভম্ব!
হয়তো লজ্জা পেয়েছে মেয়েটি।
কিন্তু মন থেকে কোন কিছুতেই
সরাতে পারছেনা মেয়েটিকে।
পরের দিন আবারো দেখা, ঠিক
একই প্রশ্ন। কিন্তু মেয়েটি নিরব।
মামা ঘৃণায়  লজ্জায়,
কিছুই বলল না।
মামা ভাবতে ভাবতে যেন
অংকের ফল মিলাতে পারছেনা।
হয়তো মেয়েটি অনেক সুন্দর
তাই এত অহংকার! আজ মামা
ওকে বলেই বসল কেন এত
অহংকার? মেয়েদের অহংকার
থাকা বেশি ভালোনা।
মেয়েটির দু'চোখে নিরবে
অশ্রু বেয়ে পড়লো কিন্তু
কোনো কথা বললনা!
মামা হতবাক হয়ে গেল
কিছুইতো বলেনি তাহলে
কেন এই নিরব কান্না!
একদিন মামা মনে মনে
ভাবল, এক টুকরো কাগজে
তাকে মনের কথা লিখে জানাবে
ক্ষমা চেয়ে নেবে।
চিঠি খানা লিখে পকেটে
রেখে দিল। আজ যে ভাবেই হউক
হেলেনকে এই চিঠি দিতে হবে।
বলতে ভুলে গেছিলাম মেয়েটির নাম
"হেলেন "
কিন্তু বড়ই নির্মম।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মানুষের
জীবনকে ঠেলে দেয় কঠিন জীবনে।
একটি দুর্ঘটনা একটি জীবনকে
সর্বনাশ করে দেয়। বেঁচে থেকেও
বাঁচার স্বাদ জাগেনা। মনে স্বপ্ন থাকে
সেই স্বপ্ন তছনছ হয়ে চোখের অশ্রুতে
হৃদয়ের বোবা কাঁন্নায়।
যে দিন চিঠি খানা দেবে ঠিক
সেই দিন ই...
মামার ছাত্রী মামাকে বলল
স্যার,
আমার আপু কথা বলতে পারেনা!
আমার আপু সবকিছুই বুঝে কিন্তু
আপুকে কেউ বুঝেনা।
কথাগুলি শুনতে শুনতে...
মামার চোখে পানি এসে গেল
চোখ মুছে আর জিজ্ঞেস করে
কেন কি হয়েছে?
স্যার...
আপু যখন ক্লাশ নাইনে পড়ত
তখন আপুর একটা অসুখ হয়েছিল
অনেক চেষ্টা করেও আমরা
আপুকে আগের মত করে
ফিরে পেলাম না।
মামার সেই চিঠি
আমি পড়েছি,
কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে রাখতে
পারিনি।
হেলেনকে কী  আর বলব?
হেলেন হয়তো জানেনা চিঠিতে
কি যে লুকিয়ে ছিল।
কিন্তু, তার চেয়ে অধিক কষ্ট
লুকিয়ে আছে হেলেনের বুকে।
হেলেন,
তোমার ভালবাসা বুঝার লোক
এখনও পৃথিবীতে আছে।
তোমাকে যে বুঝবে সে স্বর্গ পাবে।
মুখে ভাষা নেই,
কিন্তু মনে আছে অনেক
প্রেম, দরদ , তোমার বোবা
কাঁন্না আজো আমার
বুকে ভেসে আসে
বাতাসের সাথে।
কারন, আমি উপলব্ধি করেছি,
বোবার শত্রু নেই।
বুকে যে প্রেম সে প্রেম
মনের রং দিয়ে
আল্পনায় সাজিয়ে রাখতে
হয়। তুমি সুখী হও
তোমার দুঃখে যে দুঃখী
সে সত্যিই ভাগ্যবান।
মামা,
তোমার কোন দোষ ছিলনা
জানি।কিন্তু,
হেলেন কেমন আছে
তা কি জানো?
---------------------------------------------
রচনাকালঃ ১৬/০৪/২০১৪ ইং
ইউ,এ,ই(দুবাই)