আমাদের বাবারা সে সময় রোয়াকে বসে আড্ডা দিতেন
পাঁচ সাতজন মিলে, আমি তখন থ্রি কিংবা ফোর
চারটে বাজলেই ধবধবে পাঞ্জাবি চোস্ত্ আর
ডাবল পাওয়ার চশমাতে অপার্থিব মনে হত বাবাকে !
বাবার বন্ধুরা আমার মাথায় হাত রেখে খুব আদর করতেন
গলা নামিয়ে জানতে চাইতেন, মা কোথায় রে --
মাকে আমি কখনও সাজতে দেখিনি
রেশনে সস্তার খদ্দরে আধো ঘোমটায় রান্না আর ঠাকুর ঘরটাকেই পৃথিবী করে নিয়েছেন | বাবার পছন্দের সব
জোগান দিতে দিতেই বুড়িয়ে গেলেন কবে --
কাছে গেলেই মায়ের গা থেকে অদ্ভুত এক গন্ধ পেতাম আমি
পথে ঘাটে তরুণী,কুমারীর মত নয়
সে গন্ধের কোন সাদৃশ্য পাইনি আজও |
বহুকিছু পোষার মত বাবারও শখ ছিল মেয়েমানুষ পোষা
বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে এঁটে উঠতে পারিনি কোনও দিন
বাবা আর মায়ের শোবার আলাদা ঘর কেন --
বললেও আমল দিতাম না বন্ধুদের
একেকজন ডাগর সুন্দরী
কেউ মার্সিলিয়ান তো কেউ রুশিয়ান কেউ দুগ্ধবতী তো কেউ
ইরাবতী -- আমার গরীব মায়ের সমস্ত খোরাকটুক
দখল করে রাখা ওদের ওপর ঘৃণা হত খুব আমি ক্লাশ টেন
একদিন হঠাৎ করেই চলে গেলেন বাবা
সম্প্রতি আমি বিয়ে করেছি মায়ের পাশে বৌ
চৌখস গেঞ্জি আর ছোট্ট প্যান্টালুনে হেব্বি লাগে
কি দারুণ শারীরি ভাষা, জীবনেও শিখল না মা'টা
আজ মাও নেই,ছবিতে মালা ঝুলিয়ে গুণগান করেছি সবাই।
ক্রমে ফাঁকা হচ্ছে রান্নাঘর,চচ্চরি,শুক্তো,অম্বল,ঝাল,ঝোল
একে একে মিশে যাচ্ছে অন লাইন ফুডে |
তাই বলে বাবার মত কাপুরুষ নই
বৌকে দেখিয়ে রীতিমত অহংকার হয় আমার
মাথা উঁচু করে আমরা পার্টিতে যাই হাত ধরে
সিনেমা,থিয়টারে আমরা সস্ত্রীক বসি ফার্স্ট ক্লাস চেয়ারে
ছিপছিপে জিনস টপে দারুণ দেখায় ওকে
টপ নটের ডানপাশে চন্দ্রমল্লিকা গুঁজে দিই একঝাঁক-
নাগরিকের সামনে,সরিয়ে দিই কপালে গুচ্ছ চুলের উপদ্রব
লিপস্টিকের ৩ নং স্টিকটা খুলে ধরি
চাইনিজ ননভেজের পর , বাম হাতে রুমাল
বাবার মত কাওয়ার্ড হতে পারিনি কখনও !!