সময় কাটানো রেস্টুরেন্টের সেই পুরনো টেবিল—
আজও ডেকে নিল একিভাবে বহুকালের মতো!
বহু ক্লান্তির ক্ষণিক বিশ্রাম, একদম একা কাটাতে চাই—
অন্তহীন অবজ্ঞায় ভুলে যেতে চাই জড়ানো ইতিহাস,
নিস্তরঙ্গ সময় কাটাবো আজ! একেবারে চিন্তাশূন্য হয়ে।
চায়ের কাপের উষ্ণতা সবেমাত্র ঠোঁট ছুঁয়েছে—
এমন সময় চাপা চিৎকারের কিম্ভুত  শব্দ!
ফিরে দেখি বিশ্বায়ন আর দেশের সামাজিক ভবিষ্যৎ নিয়ে,
দুই মাঝবয়সি ভদ্রলোকের বিকট তার্কিক আস্ফালন।
চায়ের কাপটা নামিয়ে কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠলাম,
এর থেকে স্থুল বিষয়েও এমনভাবে চমকে উঠিনি কখনো!  
না! বিচলিত হলে হবে না যা হয় হোক—ভাঙব না প্রতিজ্ঞা।
একেবারে শ্মশানের পাশের নিম গাছের মতো বিন্দাস থাকবো,
মৃত মানুষের আত্মীয়ের কান্না, কিংবা শ্মশান যাত্রীর উল্লাস—
কিছুতেই কিছু যেন না যায় আসে, একেবারে নির্বিকার থাকতে চাই!
ঠিক, ওই পাশের টেবিলে মুখোমুখি বসা  ওই ওদের দুজনের মতো।  
হয়তো কিছু ভুল হোল বলা—ওরা ঠিক চুপ নেই,
টেবিলের তলায় রণংদেহি দুটি পায়ের যুযুধান আন্দোলন,
আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে গুহাচিত্রের বিভঙ্গে ওদের চোখে মুখে!  
আর ভরা দু কাপ চায়ের বাষ্প উড়ে যেতে যেতে—
হারিয়ে চলেছে সকল উষ্ণতা—অনুভূতিহীন শীতলতায়।  
রেস্টুরেন্টের  ছেলেটি এসে বলল দাদা চা যে জুড়িয়ে গেল!
যাক জুড়িয়ে!তবু ভাবব না কিছুই, কোন কিছুই—
একটুখানি ফুরসৎ চাই, আর কোন ভাবনার ব্যস্ততা ভালো লাগে না!
ওরা চলে গেল! হয়তো আন্দোলনের সাময়িক বিরতি দিয়ে!
এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে মিতা চেয়ারটা টেনে সামনে বসে পড়ল,
সরি! একটু দেরি হয়ে গেল আসলে কি জানিস তো—
এম.কে.ডির ক্লাসটা শেষে ছিল, আর তুই তো জানিস,
এম.কে.ডির ক্লাসটা তুইও কখনো মিস করতিস নি।
চল, কলেজ ষ্ট্রীট যাবি তো? কি রে কিছু তো বল!
কোন উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে পড়তে চাইলাম ওর সঙ্গে!
রেস্টুরেন্টের  ছেলেটি আমার ঠাণ্ডা চায়ের কাপটি সরিয়ে নিল,
দিয়ে গেল পাক খেয়ে উড়ে চলা বাষ্প সমৃদ্ধ দু কাপ চা।  
আমি তখন ভাবছি ওই দুই ভদ্রলোক আর ওই অন্য দুজনের কথা!  
কত অবহেলায়,চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে গেল ওরা,
আমিও তো ওদেরই মতো একজন—আমারও নষ্ট হয়েছে চা,
বিশ্বায়ন,প্রয়োজন, অপ্রয়োজন আর প্রেমের তত্ব বড় জট পাকিয়ে গেল,
জট পাকিয়ে গেল গ্রহণ বর্জনের নিতান্ত নিঃস্পৃহ বিষয় অনুভূতির।  
সময়ের ছবি দিয়ে গেল ভেঙ্গে, সময় কাটানোর বৃথা প্রচেষ্ঠার,  
তারপর বইয়ের দোকানে মিতা আমায় কিনে দিয়েছিল,
এলোইজ অ্যান্ড আ্যবেলার্ড আর গ্রীন ইলিউসন,
শুনেছি দার্জিলিঙের চা নাকি ইংরেজদের খুব পছন্দ!
তাতে আমার কি যায় আসে,হয়তো মিতা পেরেছিল বুঝতে।
আমার চিন্তাশূন্যতার চেতনার কথা! তাই সে দিয়েছিল,
গভীর বিপরীত চেতনার দুখানি বই আমার জন্মদিনে!
তা দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল আমার বিড়ম্বনা ।
সামাজিক বিবর্তন আর প্রেম সম্পর্কে কত কাছাকাছি বা দূরবর্তী—
তা ভাবার প্রকাণ্ড দায় নিয়ে তাই ঘুরছি পৃথিবীর গতির সাথে!  
চেতনার পরিপূর্ণ বিশ্রামের ক্ষণ তবুও তো প্রয়োজন—
তাই হয়তো এই ভীষ্মের শরশয্যা নিতে হবে বরণ করে।    
শীতল পরিত্যক্ত চায়ের কাপের ইতিহাস ঘেঁটে!!!!