আজ আমি তোমার অনেক কাছে ছিলাম—
তবুও পারিনি দিতে আমার সুখের খবর;
পারিনি দেখাতে জমা কষ্টের সব ছবি;
নাটকের গড্ডালিকায় গড়াতে গড়াতে থেমে,
মুখ তুলে চেয়েছি ক্ষণিক!
আর শুধু দেখেছি চেয়ে নিস্তরঙ্গ যবনিকার একচল্লিশ পাতা।
এক মুঠো সূর্যের আলো চেয়েছি আকাশের কাছে,
কথা দিয়েছিল সেও--
কালো মেঘ কুজ্ঝটিকায় তাও ঢেকে রইলো সারাদিন;
তবু অপেক্ষায় ছিলাম কিছুক্ষন,
আর দাঁড়াতে দিল না পর্দা সরানো লোকটা;
হুইসেল বাজিয়ে নামিয়ে দিল পর্দা;
মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা—
দৃশ্যের কারণেই হয়তো অন্ধকার ছিল;
একচল্লিশ পাতার শুরু!
প্রম্পটার ব’লে চলেছে,রবি ঠাকুরের কথা—
“কেমনে ফিরিয়া যাও না দেখি তাঁহারে।
কেমনে জীবন কাটে চির অন্ধকারে”॥
ওটা আমার ডায়লগ ছিল।
কিছুতেই তা আর আমার কানে আসছিল না;
মনেও পড়ছিল না কোনো কিছু!
আমি তখন স্থির চোখে দেখছিলাম অস্তগামি সূর্য;
ডুবে যেতে যেতে ছড়ানো আবির;
কেমন ক’রে রাঙিয়ে দিচ্ছে তোমার উত্তরীয়;
তোমায় যেতে দেব না ভেবে—
একবার হাত তুললাম, থামো! যেয়ো না—
প্রম্পটার ভাবলো তাকে থামতে বলছি;
নাটকের বইটা নিল তার মুখ বন্ধ করে!
নির্দেশক পর্দা নামিয়ে দিতে বললো,
দর্শকের হাততালিতে বোঝা গেল দারুন হয়েছে নাটক;
পোঁছে গেছি একচল্লিশ পাতায়;            
আমি যে তখনো দাঁড়িয়ে রয়েছি একইভাবে;
তোমায় দিতে চেয়ে—
আমার সকল সুখের, সকল দুখের খবর।
কেউ আর দেয়নি সময়—
লোকে ভাবলো কি দারুন যবনিকা,
আমার যে তখন সত্যিকারের সমাপ্তি--
কত কিছু আর গেল না বলা,
নির্বাক স্থির জড় সমাধিস্থ শরীরে --
অন্ধকারেই পোঁছে গেলাম একচল্লিশ পাতায়।