স্বপ্ন কাকে বলে?
যাপিত জীবন আর স্বপ্ন যখন মিলেমিশে একাকার হয়,
তাকে আর স্বপ্ন বলা যায় কি?
এক বালক তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন,
জমা রেখেছে বুকের খুব গভীরে ঐশী বানীর মতো।
স্বপ্নটা এমনিতরো,
বিকেলের বৃষ্টিতে পিচ্ছিল গায়ের মেঠো সড়ক।
থকথকে কাদার স্থানে স্থানে জমে আছে পুকুর সদৃশ জল,
এমনি এক বন্ধুর পথের পথিক নিঃসঙ্গ বালক,
কতই বা বয়স হবে তার এগারো কি বারো,
নির্জন পথ, আবিরে রাঙা অস্তগামী সূর্যটা ঝুলে আছে দিগন্তে।
আশে পাশে কেউ নেই ।
খুব সন্তর্পনে হেঁটে চলেছে সে।
এমনি সময়ে মহা সংকট হয়ে সামনে এসে দাড়ালো নড়বড়ে এক সাঁকো।
যার পাটাতন শিশুর প্রথম দাঁত পরার মতো মাঝে মাঝে উধাও।
এখন উপায়, সামনে এগোতে হলে ভাঙ্গা সাঁকো পাড়ি দিতেই হবে,
দৃঢ় সংকল্প তার।
কিন্তু অতটুকুন ছেলের আর কতটুকুন সাহস ।
একদিকে সন্ধ্যার আধার ঘনিয়ে আসে,
অপরদিকে বালক থমকে দাড়িয়ে থাকে দুর্ভাবনায়।
ঠিক তখনি কেউ একজন পিছন থেকে আলতো করে কাঁধে হাত রাখে,
শুধায়…
কি রে ব্যাটা সামনে এগোতে ভয় পাচ্ছিস?
ভয় কি, আমি আছি না।
চমকে উঠে বালক, ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়,
কে ও, কাকে দেখা যায়, বড় চেনা চেনা লাগে।
উল্লাসে, চিৎকারে বলে “বাবা”! এতদিন কই ছিলেন?
লোকটা মৃদু হাসে।
বাবার হাত ধরে পার হয়ে যায় বালক স্বপ্নের ভাঙ্গা সাঁকো।
কি দারুন অনুরাগে তন্দ্রা ভাঙ্গে।
এমনি করেই একের পর এক পার হয়ে যায় জীবনের নানান সংকটও,
অদৃশ্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকেন বাবা,
যাকে মুখফুটে একবার বাবা ডাকার স্বাদ, আজন্ম লালিত স্বপ্ন বালকের।


পাদটীকা: বালকের বয়স যখন পাঁচ। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তার বাবা তখন অন্য ভূবনের বাসিন্দা। বাবার সাথে বালকের কোন স্মৃতি মনে নেই।