এই মহাবিশ্বে যা কিছু দৃশ্যমান, দেখি যা দু'নয়নে
নাম তার যেথা যা-ই হোক, একই চিত্র ফুটে উঠে মনে।
মধ্যে তার আরও কিছু আছে, যার স্পর্শ করি অনুভব    
দেখি না তা দু'নয়নে, তবু তার অস্তিত্ব জানি বাস্তব।


এ মহাবিশ্বে আজও ‘শব্দ’ এক অদৃশ্য মহাবিস্ময়
মহাশব্দে সৃষ্টি এ মহাবিশ্বের, শব্দেই হবে মহাপ্রলয়।
পক্ষীর কূজন, বাতাসের শনশন, বনের মর্মর
বন্যের শব্দে মুখরিত বন, নৃত্যের শব্দে নির্ঝর।
পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে প্রকৃতির কথা হয় একই শব্দে
মনুষ্য যা হারালো ধরনীতে কালে সভ্যতার লব্ধে।
তবু সহস্র ভিন্ন শব্দে সহস্র মানুষের অদৃশ্য মনে
একই বোধ জন্ম নেয় কী মহাবিস্ময়, সংগোপনে!
যাহা কেউ দেখেনি কভু, কোনদিন করেনি স্পর্শ  
সেই করে স্পর্শ মন, আনে হাসি-কান্না, বেদনা-হর্ষ।


সৃষ্ট শব্দের সমাহারে মানুষ বিভাজিত অসংখ্য ভাষায়
মানুষের একক ভাষা লুপ্ত আজ রহস্যের কুয়াশায়।
যে ভাষায় কথা বলে সদ্যজাত শিশু, শিক্ষার আগে
যে শব্দে সকল ভাষার মাতৃমনে একই অনুভূতি জাগে
জ্ঞানের সমুদ্রে হারায়েছে তা মানুষ - সৃষ্টি-কুল-মনি
উপহাসে তার প্রকৃতি তোলে মনুষ্য-শব্দের প্রতিধ্বনি।


হে মহা-অদৃশ্য! যে শব্দ দিয়েছিলে প্রথম আমার মনে
তা আজ বিস্মৃত, বিকৃত আর বিক্রীত পৃথিবীর কোণে।
করো পুনঃজাগরিত সেই আদি শব্দ আমার অন্তরে
সে ভাষায় হোক আমার শেষ প্রার্থনা তোমার তরে।
যে ভাষায় আপত্য স্নেহে পেয়েছিনু স্থান মাতৃক্রোড়ে
তোমার করুণা যেন পাই, মুখে ফের সেই ভাষা পড়ে।