সূর্য করে ডুবি ডুবি সন্ধ্যা নামার আগে
ফসল ক্ষেতে দাঁড়িয়ে বুকে স্বপ্ন কত জাগে
পান্তাভাতে কাঁচা মরিচ, শুঁটকি ভর্তার ঢেকুর
হুক্কার পেটে শব্দ উঠে গুড়ুম, গুড়-গুড়-গুড়
ছোট ধোঁয়ার কুন্ডলিটা আস্তে আস্তে বাড়ে
রাঙা বৌয়ের পিঠের পরে ঘামাচি সব মারে।
হঠাৎ করে স্বপ্ন হারায় রমিজ চাষীর মন
চমকে দেখে দাঁড়িয়ে পিছে গাঁয়ের মহাজন।


রমিজ চাষী গাঁয়ের কবিয়াল
সুরে সুরে গান গেয়ে যায়, কথায় শুধু তাল
তার কবিতা লেখার সময় নেই
মহাজনের ভাবনা এলে হারিয়ে ফেলে খেই।
সেই মহাজন চলার আগে সামনে চলে জুতু
চিলুমচিটা হাতে হারু কুড়ায় পানের থু থু।
হাঁটুর ব্যথায় লেঙচি হেঁটে দাঁড়ায় জমির আলে
বাতাস কাঁপে লজ্জা পেয়ে মহাজনের গালে।
রমিজ না কী কবি যেন? এই শুয়োরের বাচ্চা
ফসল হলে দাদন বাবদ পাই যেন সব, আচ্ছা!
রমিজ ভাবে, স্বপ্ন পুড়ে মহাজনের তামাকে
সে’দিন কবে? আমার জিনিস দেবে যে’দিন আমাকে?


জীর্ণ কুঠির জমিলার ঘর মাঠের প্রান্তে, গ্রামে
সূর্য ডুবার অনেক আগেই সেথায় আঁধার নামে
আঁধার ঘরে জ্বলে যেথায় বৈধব্যের আগুন
সেথায় এলে তৃষ্ণা কাতর মহাজনের খুন।


চালের ফাঁকে জোছনা নামে রমিজ কবির ঘরে
ভ্যাপসা গরম, উদোম দেহে শুয়ে মাটির পরে।
কাছেই শুয়ে তার করিমন আঁচল পেতে জাগে
ক্লান্ত দেহে আলতো ছোঁয়ায় শরমের রং লাগে।
মধ্যিখানে ভাবনা শুধু, আর কতদিন হায়
রমিজ চাষীর সুখ যাবে সব মহাজনের গোলায়?