শীতের শেষ, বসন্তের সকাল, সূর্য-তেজ কম
অতি বৃদ্ধ বাবা বসে গায়ে নেয় ওম।
অদূরেই জোয়ান ছেলে ব্যস্ত ছিল কাজে
নতুন রঙের ফুল লাগায় পুরনোর মাঝে।
হঠাৎ অদূরে বাবার আবছা দৃষ্টিতে পড়ে
ক্ষণে ক্ষণে থেকে থেকে যেন কিছু নড়ে।
বাবা তারে শুধাইল, "দেখো দেখি খোকা
কি নড়ে ওখানে ওটা, না কি ফুলের থোকা?"
খোকা কয়, "কিছু নয়, ওটা একটা পাখি
ব্যস্ত আছি, অযথায় কোরো না ডাকাডাকি।"
বাবা থাকে চুপচাপ, আবার ক্ষণ পরে
ছেলেরে শুধায়, "খোকা, কি যেন ওটা নড়ে?"
ছেলে বলে বিরক্তিতে, "বললাম তো একবার
ওটা পাখি - কিছুই থাকে না মনে তোমার!"
ক্ষনিক পরে আবার বাবা গেল সব ভুলে
ঝাপসা চোখ, নত মাথা, একটু ঊর্ধ্বে তুলে
আবার শুধায়, "ওখানে নড়ে, খোকা ওটা কি?"
খোকার মেজাজ তুঙ্গে যেতে আর নেই বাকি -
"ওটা পাখি, এই নিয়ে বললাম তিন বার
একই প্রশ্ন বারবার", খোকার কন্ঠে চিত্কার।


স্তব্ধ বাবা, নিশ্চুপ বসে কাটে কিছুটা সময়
শেষে বলে, "বাবা, খোকা, একটু হবে কি সদয়?
ঘর থেকে নিয়ে এসো পুরানো ডায়রিখানা
একখানি তথ্য আজ হোক তোমার জানা।"
ছেলের মেজাজটা হলো ক্রমে একটু নরম
হয়ত বা ব্যবহারে পেয়েছিল একটু শরম
ডায়রিটা নিয়ে এনে দিল বাবার হাতে।
বাবা বলেন, "তিরিশ বছর আগের এই পাতে
একটু পড়ে শোনাও বাবা, লেখা আছে কি
বলতো ওটার অর্থ হয় তোমার কাছে কি?"
ছেলে পড়ে মৃদু স্বরে, হয় হতবাক
এগারো বার লেখা আছে, শুধু কাক, কাক।
বাবা বলেন, "তখন তোমার বয়স ছিল চার
এইখানে ব্যস্ত ছিলাম কাজে, তুমি এগারো বার
শুধিয়েছিলে আমাকে, "বাবা ওটা কি?"
স্নেহ ও আদরে বলেছিলাম, বাবা, ওটা পাখি-
নাম 'কাক', প্রতিবার লিখেছিনু এই ডায়রিতে;
এটা আজ অর্থহীন, তবু রেখো আলমারিতে।"
  
রচনা: ১১ জুন, ২০১৬