মাগো তোমায় মনে পড়ে
কেমন করে বিলিয়ে দিলে তোমায় আমার তরে|
মনে পড়ে কথাগুলো হাজার কাজের মাঝে
এখনো যে তোমার দোয়া স্পষ্ট কানে বাজে|
দিনটা ছিল বৃষ্টি ঝরা রাস্তায় ছিল কাদা
কলেজ যাব, তৈরী হচ্ছি, তুমি দিলে বাধা|
বললে তুমি, কাজ নেই তোর কলেজ গিয়ে এমন বাদল দিনে
আয় না খোকন, ধান কটা যে হয় না ভানা একটা মানুষ বিনে|


ঢেঁকিখানা উঠছে, নামছে আমার পায়ের চাপে
তারই সাথে উঠছে নামছে বুকটা আমার, কেমন যেন কাঁপে|
কেমন করে বলি মাগো ফিসগুলো সব বাকি, লাগবে কিছু টাকা
আমার চেয়ে কে আর জানে তোমার দুহাত কতখানি ফাঁকা|
সাধ্য কি মা তোমার দুটো চোখকে দেব ফাঁকি
বুঝলে তুমি একটা কিছু, নইলে কি আর চুপটি করে থাকি|
বললে তুমি, ভাবছিস কি? বল না আমায় খুলে|
হঠাৎ আমার কান্না এলো, বুকটা উঠলো দুলে
ঢেকির পাড়ে বসে বলি কান্না ভেজা স্বরে
মাগো আমার কি হবে আর লেখা পড়া করে?
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, কলেজ তাদের সাজে?
মুচকি হেসে বললে তুমি, বকিস নাত বাজে,
কত টাকা লাগবে তাই বল, তার ব্যবস্থা হবে|
বললাম আমি, সব বেচেছ, এরপরে আর কিইবা তোমার রবে?
বললে তুমি, ভাবিস নাতো, আছে ওরে আছে
তোকে দেওয়ার দুটো জিনিস আছে আমার কাছে|
তার একটা হলো মায়ের দোয়া, আজকে দিলাম তাই
এরপরে তুই দেখতে পাবি, জীবনে তোর টাকার অভাব নাই|
আর একটা কি বুঝতে আমার কয়েকটা দিন গেলো
বুঝলাম যখন ফাঁকা তোমার কান দুখানা আমার চোখে এলো|


এরপরে যে কেমন করে অভাব গেলো নেই তা আমার জানা
বিধাতা কি পারে মাগো ফিরিয়ে দিতে তোমার দোয়াখানা?
আজকে আমার সবই আছে চাওয়ার কিছু নেই
মাগো, বুকের ভিতর তোমার অভাব ভুলায় কথার খেই|
একটি চাওয়া বাকি আছে, আজ চাইব তা প্রাণ ভরে
আল্লাহ, মাকে তুমি রেখো তোমার বেহেস্তের এক ঘরে|
যে মা আমার দিয়েই গেছে নেয় নি কারো কাছে
তোমার দ্বারে তার বেহেস্ত আমার চাওয়ার আছে|