বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে হৃদয়ের জানালাটা খুললাম
চলমান বাংলার ছবিগুলি মনের ক্যামেরায় তুললাম।


বাসরের ক্লান্তিতে নববধূ ঘুম থেকে এখনো তো ওঠেনি
কুয়াশায় ঢাকা ওই দিগন্তে সোনাগলা সূর্যটা আলো নিয়ে ফোটেনি।
ব্যস্ত এ শহরের প্রান্তে, সবুজ গাছগুলি নিরালায় দাঁড়িয়ে
বারবার ডাকে, যেন অপেক্ষা-উদগ্রীব সহস্র হাতগুলি বাড়িয়ে।


কুয়াশার বুক চিরে সূর্যের ফালিটা রাঙালো যে নদীটির বুক
তারই মাঝে ফিরে পাই ভুলে যাওয়া চির-চেনা বাংলার মুখ।
শীতের সকালে শাড়ি দিয়ে প্যাঁচানো তপ্ত মনের ওই দেহটা
বাঁশ ঝাড়ের নীচে ধূমায়িত সরোবরে চেপে দিল কে ওটা?


কেন জানি সেই ক্ষণে হৃদয়ের শিহরণে মনের কথাগুলি ভুললাম
চলমান বাংলার ছবিগুলি মনের ক্যামেরায় তুললাম।


আঁকা বাঁকা রাস্তার দুপাশ ছুঁয়ে ডুবাগুলি ভরা ওই কচুরিপানায়
উদলা গায়ের বালক বালিকারা সাদা দাঁতে মাছেদের আদর জানায়।
ক'টা পাখি কক কক শব্দে উড়ে যায় অদূরে, ওদের তাড়া খেয়ে
আবার ফিরে আসে ঝাপটানো ডানায় সোনালি-রুপালি মাছ চেয়ে।


বিরান জমিতে চাষের অবসরে কিষাণ বসে তৃপ্তিতে খাচ্ছে
ঘোমটার আধো ফাঁকে কিষাণীকে পাশে দেখে সর্ষের ফুলগুলি নাচছে।
গরুগুলি অদুরেই জমির আইলের ঘাসগুলি খাচ্ছে -
পিঠে তার পাখীগুলি উড়ি উড়ি বসি বসি লেজের সোহাগ যেন পাচ্ছে।


কেন জানি সেই ক্ষণে হৃদয়ের শিহরণে মনের কথাগুলি ভুললাম
চলমান বাংলার ছবিগুলি মনের ক্যামেরায় তুললাম।


রাস্তার পাশে বসা ছোট বাজারটায় সূর্যের ওম বাড়া রোদে বসে
জীবনের আলাপচারিতায় কজনের কন্ঠ ভেজে চা ও খেজুর রসে।
শীতের দুপুরটা আসি, আসি, হাসি, হাসি, অলসতায় এলো দেরিতে
ধূঁয়া, ধূলা, হৈচৈ, পেট্রল গন্ধে, প্রকৃতির ডাকে দীর্ঘ সারি ফেরীতে।


তিলেখাজা, আমড়া, সেদ্ধ-ডিম, শশা, শীত-পিঠা জল আনে রসনায়
পিঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, সর্ষেতেলে গিন্নির ঝাল-মুড়ি চায়।
রুমালেতে মুখ ঢেকে মাথাটা বাইরে রেখে শ্বাস নেয় পাশের গাড়ীতে
যে বর যাচ্ছে খুঁজে নিতে চিরসাথী নদীর ওপারে এক অজানা বাড়ীতে।


কেন জানি সেই ক্ষণে হৃদয়ের শিহরণে মনের কথাগুলি ভুললাম
চলমান বাংলার ছবিগুলি মনের ক্যামেরায় তুললাম।


আলু, পটল, কচু, কলা, শশার ক্ষেতে মেশিনে সেচের জল তুলছে
ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবজি ও বেগুনে হাটের গাড়িগুলি দুলছে।
সবুজের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট বাড়িগুলি যেন উঁকি মারছে
তারই মাঝে ব্যস্ত জীবনের ছুটোছুটি ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টিটা কাড়ছে।


ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দৌড়াদৌড়ি ক’রে যেন বড় হওয়ার ফন্দিটা আঁটছে  
জীবনের গন্ধে অদূরে দাঁড়ানো গাইটা পরম স্নেহে তার বাছুরকে চাটছে।
অনেক দিনের পর দেখা হবে - সেই সব মুখগুলি চোখে এসে ভাসছে
অদূরের মসজিদে আছরের আজান বলে গেল সন্ধ্যা খুবই কাছে আসছে।


কেন জানি সেই ক্ষণে হৃদয়ের শিহরণে মনের কথাগুলি ভুললাম
চলমান বাংলার ছবিগুলি মনের ক্যামেরায় তুললাম।