প্রতিদিনের মত ছোট ভাই মন্জুকে নিয়ে বাংলাঘরে শুইয়েছি, রাত ১০টার মত তখন। কোন মাস এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না, তবে খুব গরমও না আবার শীতও ছিল না। সাথে ছিল হালকা কাথা। মধ্যরাত। স্বপ্নে আমি বাড়ির পূর্বপাশের রাস্তা দিয়ে (মসজিদ রোড) কোথাও যাচ্ছি। সবই ছিল ঝাপসা আর অস্পষ্ট। হঠাৎ রাস্তার পাশের আম গাছটার(আমাদেরই) উপর থেকে ভয়ানক কিছু দেখে আমি চিৎকার করতে থাকি। ওই ভয়ঙ্কর কিছুটা অদ্ভুত চোখে আমার দিকে চেয়ে, আমার দিকে আসছে। আমি একদম নড়তে পারছি না। শুধু চিল্লিয়ে যাচ্ছি।


হঠাৎ এক সময় মনে হলো আমি বিছানায় শুয়ে আছি, আমার উপর কেউ চেঁপে বসে আছে, আমাকে দম আটকে মেরে ফেলবে। আমি হাত-পা নাড়াচ্ছি (বাস্তবে কিন্তু এসব কিছুই না, শুধু আমার মুখ দিয়ে নাকি গোঙানির মত অদ্ভুত শব্দ আসছে, পরবর্তী আমার ভাই ও অন্যান্যদের কাছ থেকে শুনতে পাই।)চিৎকার করে বলছি বাঁচাও বাঁচাও। এক সময় মনে হল আমি এখন বাংলা ঘরেই শুয়ে আছি, কিন্তু কেন জানি চিল্লাচ্ছি! মুথ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছি না। ঘরের বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা-ধাক্কি, জানালায় শব্দ, কেউ যেন বলছে-'দরজা খোল'। আমি ভাবছি আমার ছোট ভাই গেল কোথায়?


এক সময় পুরোপুরি জাগতিক ভুবনে এলাম। হ্যারিকেনের মিটিমিটি আলোতে দেখি, আমার ছোট ভাই (তখন বয়স ছিল সাত বছর) বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে, ওর কাথা আর বালিশ আমার গায়ের উপর। বাইরে থেকে বাবা-মা-চাচা-চাচি ডাকা-ডাকি করছে, দরজা খুলার জন্য।


ঘটনা হলো- আমার মুখ থেকে গোঙানি শুনে ভাইটি ঘুম থেকে উঠে খুবই ভয় পেয়ে যায়, কাথা আর বালিশ আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বিছানার এক কোণে বসে কাঁপতে থাকে। বাইরে থেকে ডাক শুনতে পেলেও ভয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলতে বা আমার গায়ে ধাক্কা দেয়ার মত সাহস হয় নি। আমার এই গোঙানির শব্দ এতই উচ্চ ছিল যে পশ্চিম ঘর থেকে ছোট চাচা, পূবঘর থেকে বাবা-মা জেগে বাইরে চলে আসে। এর আগে কখনো এমন হয় নি বলে সবাই বিষয়টিতে ভয়ানক ভয় পেয়ে যায়।
আমিও জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম ক্লাস তখন এইটে পড়ি।
তারপর নানাবিধ চিকিৎসা ............ ঝাড়ফুঁক আর তাবিজ-কবজ। পরবর্তীতে এক সময় লিখব সে বিষয়ে...
অবশ্য আমি এখন আর তাবিজ-কবজ ব্যবহার করি না। জীবনে খুব কম সময়ই ওগুলো ব্যবহার করেছিলাম।