ভিক্ষার লাগি কে ওই ভিখারি
           শহর-নগর-বন্দর সঞ্চারি’
        পাতিয়াছে হাত দুয়ারে দুয়ারে,
         ভেসেছে কুটির নয়নের নীরে,
জীবনের তীর ভেঙেছে কত সর্বনাশের বান;
বুকের পাঁজর যেন গো ব্যথার মূর্ত অভিজ্ঞান।


কে ওই ভিখারি পথের দোসর প্রিয়ের মতন
কত না আদরে পথখানিরে করেছে আপন,
পথের পাথর হয়েছে শয়ন-
               পথের পালক হলো আবরণ,
পথের ধুলায় দেহের বরণ করেছে বর্ণময়;
ধুলার‍ সহিত ধুলার মিলন হইয়াছে অক্ষয়।


আঁধার শেষে প্রভাত সূর্য ডাকিছে ছন্নছাড়া,
ঘুমায়ে থাকুক সারাটি রজনী ঘুমাতে পারেনি যারা-
রাতের আঁধারে ছেড়েছে নিলয়,
                       মনুষ্যত্বের করিয়াছে ক্ষয়,
অর্থের লোভে ভিন বরণে ছুটে আঁধারের পিছে
উঁচুতে যারা থাকিতে না পেরে নেমেছে সবার নিচে।


ওহে ভিখারি, ভিক্ষার লাগি ছুটেছ জনমভোর-
এক হাতে তব ভিক্ষার ঝুলি আর হাতে আঁখিলোর।
জেগে উঠো তবে,
                                  চেয়ে দেখো ভবে
সবার আগে সূর্যকিরণ পড়েছে তোমার গায়;
খোলা আকাশের নিচে তব নীড় হয়েছে আলোকময়।


দুই পয়সায় কিনিয়াছে যারা বিধাতার রহমত
তাঁদের তরে ভিক্ষা মাগিতে করিওনা গাফিলত!
বিধাতার কাছে করি’ ফরিয়াদ
                     দুয়ারে দুয়ারে তুলেছ দু’হাত
সারাটি জনম ভিক্ষাদাতার করেছ আশীর্বাদ;
ক্ষীণ অবসরে আপনার তরে তুলিতে পারোনি হাত।


ওহে ভিখারি, বসতি তোমার বস্তিগাঁয়ের ভিড়ে
দৈরাত্ব্যের উগ্রতায় পড়িয়াছে তাহা ছিড়ে,
ঢাকা পড়িয়াছে শিশুর রোদন,
                            চির ক্ষুধিত মলিন বদন
পড়ে আছে সব চিরসুখীদের সুখের অন্তরালে;
ব্যথা অগণন ক্ষুধার পীড়ন চিরদুখিদের ভালে।


ওহে ভিখারি, বিনিদ্র রজনী কতটা করেছ পার!
কতটা প্রহর অশ্রু দিয়ে করিয়াছ পানাহার!
কান্না দিয়ে গাঁথিয়াছ মালা,
                          অশ্রুমালা ভরিয়াছে গলা,
কতবা স্বপ্ন গেঁথেছ বক্ষে খোঁজ কে বা রাখে তাঁর!
আপন উদর ভরিতে পারিলে মোদের কর্মসার।


আমরা শুধু রাজ্য জুড়ে সুখের কথা বলি-
ভিখারিসকল অন্ন যোগায় নয়নের নীর ফেলি’।
ভিক্ষাবৃতির কে দেয় প্রীতি?
                       যিনি দেন তিনি অতি মহতি,
অতি মহতির ঘাটতি আছে স্বজনপ্রীতির দেশে;
দস্যুরা তাই দাঁড়ায় পাশে অতি মহতির বেশে।


ভিক্ষার ঝুলি তুলিয়াছ হাতে, ছুটেছ পুনর্বার?
আর কতকাল সহিবে তবে দম্ভের ধিক্কার?
আর কতকাল ব্যথার সহিত
                দোসর বাঁধিবে তব পুরোহিত,
আর কতকাল সুখের সহিত করিবে বৈরিভাব?
কতকাল আর করুণ ব্যথার রচিবে আবির্ভাব?


ওহে ভিখারি, ফেলে দাও ঝুলি মিনতি আমার রাখো-
সুখের বাতাস সঞ্চারীয়া দুখের আকাশ ঢাকো।
যতটা ভিক্ষা নিয়েছ মাগিয়া
                          আপন হস্ত প্রসার করিয়া
ততটা ভিক্ষা অতি শীঘ্র করিতে হইবে দান;
ভিখারিসকল হউক দাতা, ভিখরীতির অবসান।


রচনাকাল, ২০০৬