এমনই অস্ফুট তব মুখের বচন
যেদিন শারদপ্রাতে গিয়েছিনু কাছে,
এমনই আনত শির আনত লোচন
পতিত আঁখির জল অধরের নীচে।
আনত দেহের ভার পালক সমান
ভূতলবিহনে যেন শূন্যে বসতি,
এমনই লোহিত মুখ লাজনত ম্লান-
এতেক দর্শনে মম এমনই মুরতি!
বিশীর্ণ-বিদীর্ণ তব বনস্পতিরূপ-
প্রলয় ঝড়ের পর মূঢ় মস্তকে
আপন শৌর্যচ্যুত এমনই বিরুপ
যেমতি তাঁহার শির মুষড়িয়ে থাকে!
যে তুমি চিরোদ্ধত, এমনই নিথর,
এমনই স্থির তব নেত্রপল্লব!
এতেক দর্শনে মম এমনই অসার
এমনই শীতল তব পূর্ণ অবয়ব!


বহুদিন বহুবার গিয়েছিনু দ্বারে
ভিখারির মত করে প্রসারিত হাত-
শুন্য সে হাতে আসিয়াছি ফিরে
তবুও করিনি কভু অভিসম্পাত।
সবিনয়ে মুখপানে তুলেছি নয়ন-
নীরবে হাজারবার পরিয়েছি মালা,
অজ্ঞাতে অলক্ষ্যে তব করেছি চয়ন
কবিতার-প্রেমের হাজার পঙক্তিমালা।
সঁপেনু আপন প্রাণ- শত অনুনয়-
এ তব দুয়ারপানে গেছি শতবার,
কোনোদিন এতটুকু হয়নি সময়
এ মম বিরহকাতর শুনিবার।


সেইদিন শেষবার পলকের তরে
গিয়েছিনু বলিবারে নিঠুর বিদায়-
এ তব আঁখির জল ছলছল করে
আঁখি হতে পড়িয়াছে পা’য়।
এ তব পাথর মন তখনি গলিল-
চলিল চরণ মোর অজানা উদ্দেশ;
এ তব হৃদয় জুড়ে শুধুই বাজিল
এ মম চরণধবনি বিধুর বিশেষ।
এ মম প্রতাপ ক্ষোভ লোলুপ বাসনা
এই তনু-কায়-মন সকলি ছাড়িল,  
যে তব দোসর লাগি আজন্ম সাধনা
এ মম বিদায়ক্ষণে সকলি থামিল।
থামিল অনন্ত সে মানস কামনা,
থামিল ধরার পর যত আরাধনা,
এহেন বিবাগী মনে সুখের ছলনা-
সখীগনে ভাবে মোরে চিরসুখীজনা!


রচনাকাল, জানুয়ারি ২০০৭