গ্রামটির নাম লতাপাতা। আমি সেই গ্রামে গিয়েছিলাম।  লতার সাথে পাতার একটা সম্পর্ক আছে, আবশ্যিক সে সম্পর্ক। আর আত্মীয়ের বেলায় লতায় পাতায় হল কোনরকমে অতি দূর ক্ষীণ একটা সম্পর্ক। সম্পর্ক হয় আত্মায় আত্মায়, সে জন্যই আত্মীয়। রক্তের সম্পর্কও দূরে সরে যেতে পারে, আত্মার নয়।
♦কবিতাটি---


স্মৃতির দুপুর
----
এখন সময় ওখানে যাবার,
আঁকাবাঁকা পায়ে চলার পথে
লতাপাতা গ্রামে,
যেখানে কাটে আমার অদ্ভূত নিঃশব্দ দুপুর।
আমার সমুদ্র নেই, আমার কাছে নদী,
বয়ে চলা শান্ত ধারার নদীটি,
কেমন একা একাই পথ চলে,
ওখানেই কাটাই আমি অদ্ভুত নিঃশব্দ দুপুর।
মাঠের ওপারে সোনালী ধানের শীষ
হাতছানি দিয়ে ডাকে,
শষ্যদানায় পরিপূর্ণ মাতৃসমা নিভৃত গ্রামটি,
ওখানেই কাটে আমার ঘোর লাগা নিঃশব্দ দুপুর।
আমার শৈশব ছুঁয়ে যায়,
আমার কৈশোর আমায় ডাক দিয়ে যায়,
মাঠের পর মাঠ আলপথ বেয়ে দৌড়ে আকাশটা ছুঁতে চাওয়া,
সব স্মৃতি রোমন্থনে কাটাই আমার একাকী নিঃশব্দ দুপুর।
তুমি মাটি ভুলে গেছো, সাগর পাড়ি দিয়ে ভিনদেশে যাও,
পিছনে পড়ে থাকে তোমার অতীত,
যেখানে ছিলো বৃষ্টি ভেজা সোঁদা মাটির গন্ধ,
ছিলো ঘুঘু আর দোয়েল, পাখির বাসা খুঁজতে গিয়ে
মৌমাছিরা তোমায় তাড়া করেছিল।
তুমি সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখো আকণ্ঠ তৃপ্তিতে
আর আমায় পত্র লেখো,
ওখানে থাকে কত অজানা অচেনা জিনিস আর
ভিনদেশীদের নাম,ও কি আর আমি চিনি!
তোমার চিঠিতে থাকে না পলাশ ফুলের কথা,
থাকে না বকুলের শুকনো মালাটির কথা,
ওগুলো তুমি আমি একসাথে গেঁথেছিলাম।
তুমি ভুলে গেছো আঁকাবাঁকা পায়ে চলা পথটির কথা,
ভুলে গেছো তোমার লতাপাতা গ্রামটির কথা।
তুমি সমুদ্রে থাকো, বন্দরে ভিড়াও জাহাজ,
তোমার গায়ে কি কেবলই লোনাজলের গন্ধ এখন?
মাটির গন্ধ নেই? লতাপাতা গ্রামের মাটির গন্ধ?
কেমন করে বদলে গেলে তুমি!
আমি এখনও লতাপাতায় দিন কাটাই সময় করে,
পিছন ফিরে তাকাই যেখানে তুমিও ছিলে
শাপলার ফুল নিয়ে বিজয়ীর বেশে।
সব আয়োজন ছিলো কেবল আমারই জন্য,
একটি সকাল, একটি দুপুর, একটি সন্ধ্যা
আর ওখানে তোমার যত অন্বেষণ সব, সব ছিলো
কেবল আমারই জন্য।
এখন তোমার চিঠিগুলি আসে লোনাজলের গন্ধ নিয়ে,
কোন আয়োজন নেই আমার জন্য।
আমি চিঠি ছুঁয়ে দেখি, তারপর আকাশ দেখি,
আকাশটা বদলে নাই এতটুকু,
সব কিছু আর আগের মত নেই
কিন্তু আকাশটা আছে আমার।
আছে লতাপাতা গ্রাম আর নিঃশব্দ একাকী দুপুর।
১৩/৪/১৯