অফিসের কাজে দেরি হয়ে গেল,
তড়িঘড়ি করে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,
ঘরে ফিরতে হবে যে.
সেই পরিচিত মেঠো রাস্তাটা ধরলাম,
কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই অন্ধকার ঘনিয়ে এল.
খেই হারিয়ে ফেললাম,
কোন দিকে যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না.
ওদিকে চারপাশে ভূতের কেত্তন সুরু হয়ে গেছে,
দাঁত, নখ বের করে আঁচড় কাটতে সুরু করেছে,
প্রানটা বুঝি যায় যায়.
রাম, রাম করতে করতে ওপরের দিকে তাকালাম,
চোখে পড়ল, পশ্চিম দিগন্তের তাল গাছের মাথার উপর সেই সন্ধাতারার,
আমার ছোট বেলার সেই সাথী.
তারপর দুজনে কোথায় হারিয়ে গেলাম,
হয়তো যৌবনের উদ্দামতায় তার খোঁজ করিনি.
ওকে দেখে, ওকে লক্ষ করে সোজা পশ্চিম দিকে হাঁটা দিলাম.
ভূত পেত্নিগুলোর চোখ, নখ আমার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না.
আছড়ে গিয়ে পড়লাম বড়ো বাঁধটার উপর,
আরে! সকালে এই বাঁধ থেকে নেমেই তো মেঠো পথটা ধরেছিলাম.
বাঁধের উপর উঠে একটু এগোতেই চোখে পড়ল,
বামপাশের ঘোষালদের তালদিঘীর পাড়,
প্রায়শই আমরা এখানে বনভোজনের আসর বসাই,
ওঃ সে কি আনন্দ!
সন বৎসরে বারোয়ারি মেলা বসে.
আরও একটু এগোতেই দেখা গেল,
দাসেদের উঠোনে কীর্তনের আসর বসেছে,
একটু পরে আমিও ওখানে যোগ দেব.
ওই তো আমার বাড়ীর টিমটিমে আলোটা দেখা যাচ্ছে,
এই চলে এলাম.
কিন্তু আমার সেই সন্ধাতারা,
ঈশ, তার কথা বেমালুম ভূলে গিয়ে ছিলাম!
উঠোন থেকে নেমে গেলাম,
ওই তো এখনো জ্বল জ্বল করছে.
সেও তার বাড়ীর রাস্তায় পা বাড়িয়েছে,
ওই দিগন্তের ওপারে তার বাড়ী.
কাল ইচ্ছে করেই দেরি করে অফিস থেকে বেরোব.
আবার দেখা হবে, আমার সেই সন্ধাতারার সনে,
কত গল্প করবো দুজনে, কাল, পরশু, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ.
তুমি আমার, আমার তুমি,
আমার গোধুলি লগনের ধ্রূবতারা.
           ............