কু-ঝিক ঝিক চলছে রেলের গাড়ী,
অবিরাম এদিক ওদিক সারাদিন ধরি.
ব্যস্ত স্টেশন, বহু লোকের আনাগোনা,
তারি মাঝে ভিক্ষু এক পেতেছে বিছানা.
এরে সুধায়, ওরে সুধায়,
               দয়া কর মোরে,
আমি যে দীন, দূঃখি হায়,
               একটি দিনের তরে.
স্নেহ ,মায়া উজাড় করি,ন
               দুই হস্ত প্রসারি,
দানিল এক, দুই আনা করি,
               ভরাইল আঁচল তারি.
এমনি এক সময়ে চলিতে ছিলেম   আমি,
মুহুর্ত দেখিনু তারে ক্ষনিক থামি.
দয়া জাগিল আমারও কঠিন হৃদয়টাতে,
হস্ত চালায়ে দিলেম মনি, মুক্তা ভর্তি পকেটে.
সহসা শিহরন আসি,
           দাঁড়াইল মোর পাশি,
আমার বহুমূল্য মুক্তার মনি,
           একটি যদি দিই এখনি,
কে দানিবে এক আনি মোরে,
           লক্ষ্মী যখন থাকিবে না ঘরে.
দ্রুত প্রস্থান করিনু সেথা হতে অক্লেশে,
ভাগ্যিস সযত্নের শুভবুদ্ধি আসিয়াছিল নিমেষে.


এরপর কাটিয়া গিয়াছে বহুবছর,
সময় নদীর স্রোতে নিরন্তর.
বদলাইয়া গিয়াছে অনেক কিছু,
              বদলায়নি সবকিছু,
সেই একই রেল ষ্টেশন,
              ঝাড়ুদার করিছে সেবাযতন.
তারই মাঝে আমি,
              সেদিনের ভূস্বামী,
পাতিয়াছি জরাজীর্ন বিছানা,
রেল ষ্টেশন মোর জীবনের সীমানা.
ভিক্ষা মাগি জনে জনে,
চলিয়াছে যে যাহার আপনার মনে.
সহসা মোর সম্মুখে,
        দাঁড়াইল প্রশান্ত মুখে,
গভীর উজ্জ্বল চোখ,
        নাহি বিন্দুমাত্র শোক্,
হস্ত প্রসারি আমার তরে,
        একটি মুদ্রা দানিল শ্রদ্ধাভরে.
আমিও উৎসাহ ভরে বাড়াইনু কর,
সারাশরীর হইল অবশ, কাঁপে থর থর.
সেই চোখ, সেই মুখ, সেই নাক হয়েছে উজ্জ্বল,
আমার আমি সম্বল শুধুই চোখের জল.
ক্ষনিক মুদিনু আঁখি,
        চক্ষু মেলিয়া দেখি,
কেহ নাই মোর তরে,
        রাখিয়া গিয়াছে আঁচল ভরে,
        তারই ষোলআনা.
         ............